জিইডির প্রতিবেদন: বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত নাজুক

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। মোট অর্থনীতির ৮৩ শতাংশই বেসরকারি খাতের দখলে। কাজেই বেসরকারি খাতে যদি বিনিয়োগ প্রবাহ কমে যায়, তাহলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিই দুর্বল হয়ে পড়ে। সম্প্রতি এ খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই নাজুক বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদন (ইকোনমিক আপডেট) প্রকাশ করা শুরু করেছে জিইডি। বুধবার (৭ মে) সংস্থাটি প্রথম মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধির অন্যতম বলে জানিয়েছে জিইডি। ঋণের সুদহার বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকায় বেসরকারি বিনিয়োগে তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে জিইডি। এ ছাড়া কিছু পোশাক কোম্পানি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আর ১০টির মতো ব্যাংকঋণ বিতরণের সক্ষমতা হারিয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ বাড়িয়েছে। মূলত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে বেশি। এসব কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রভাবিত হচ্ছে বলে মনে করছে জিইডি।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জিইডির প্রথম ইকোনমিক আপডেট উত্থাপন করেন সংস্থাটির সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেন। এ সময় জিইডির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মনজুর হোসেন বলেন, এখন থেকে প্রতিমাসে দেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি প্রকাশ করবে জিইডি। এ প্রতিবেদনের ফলে সরকারের সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন নীতি গ্রহণ সহজতর হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনজুর হোসেন বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে বলে যে বেসরকারি খাত ঋণ পাচ্ছে না, বিষয়টি তেমন নয়। বরং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ বাড়তি সুদ। এই সুদ কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, মূলত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন না বলেই সেখান থেকে সরকার ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আবার সরকার যদি ব্যাংক থেকে ঋণ না নিত তাহলে টাকা ছাপিয়ে সরকারের প্রয়োজন মেটানো লাগত। সেটা করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেত।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে মুদ্রার বিনিময় হার যেভাবে নির্ধারিত হচ্ছে সেটি সঠিক পথে এগোচ্ছে। এই বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে ফটকা কারবারিরা মুদ্রার বাজার অস্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে মুদ্রার যে বিনিময় হার রয়েছে তা বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের খুব কাছাকাছি। কাজেই এই মুহূর্তে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।