ছাত্রদলকে ছাত্রলীগের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে : ছাত্রশিবির

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদলকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানানো হয়৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিয়ে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল তা কিছু ছাত্রসংগঠনের আধিপত্যনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলদারি, ট্যাগিং ও দোষ চাপিয়ে দেওয়ার হীন সংস্কৃতি চালু রাখার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতা তৈরি এবং শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে।
ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সকলের দায়িত্ব উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তার দায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।’
লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, ‘কুয়েটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। খুলনার শিববাড়ীতে তাদের মিছিল থেকে “একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর” স্লোগান দেওয়া হয়।
এমন ভয়ংকর, হিংস্র স্লোগান আমরা ছাত্রলীগের মুখে শুনতাম। কিন্তু ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক নিজেদের পক্ষে স্বীকারোক্তি নিতে একাধিকবার ছাত্রদল কর্মীরা নির্যাতন করে তাকে। আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য নিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা থানার সামনে মব তৈরি করার চেষ্টা করে।
আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি পেশ করছি।’ বক্তব্যে হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রশাসনকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
অথবা নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহার গ্রেপ্তার দাবি জানিয়ে শিবির সভাপতি বলেন, ‘মুক্ত চিন্তার নামে এ দেশে ইসলামবিদ্বেষী একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। সেই গোষ্ঠীরই এক ক্রীড়নক জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা (সাজ্জাদুর রহমান)। তিনি আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর শানে চরম অবমাননাকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন; যা ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের শামিল।’