Ad0111

পাওনা টাকা চাওয়ায় খুন গম গবেষণার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদের (৭২) সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল জাকিরের

পাওনা টাকা চাওয়ায় খুন গম গবেষণার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদের (৭২) সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল জাকিরের। দিনাজপুরে চাকরিকালীন সময়েই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। শহীদ অবসরে যাওয়ার পরে তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। সেই সুবাদেই শহীদ ১২ লাখ টাকা ধার দেন জাকিরকে। আর এই টাকা ধার দেয়াই কাল হয়ে যায় শহীদের। ধারের টাকায় শুধু তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়নি বরং এটি জীবননাশের পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। লেনদেনের বিষয়টি তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ জানতো না। জাকির ধারের টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ৫/৬ মাস আগে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর শ্যামলীতে জনবহুল সড়কে প্রকাশ্যে শহীদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় হত্যাকারী মো. সাইফুল ইসলাম এবং মূল পরিকল্পনাকারী মো. জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১১ই নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার পর শ্যামলীতে আনোয়ার শহীদকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানা (৫৯) আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। র‌্যাব এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। পরে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে গত রোববার রাতে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. জাকির হোসেন (৩৭) এবং ঘাতক মো. সাইফুল (২৬)কে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৭৬ সালে আনোয়ার শহীদ গম গবেষণা কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে পরিচালক পদমর্যাদায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তার সর্বশেষ কর্মস্থল জয়দেবপুর থেকে অবসর নেন। তিনি ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে মো. জাকির হোসেনের পরিচয় হয়। গত ১১ই নভেম্বর নিহত আনোয়ার শহীদ পূর্ব পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা করতে শ্যামলীতে একটি বাস কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে ফেরার সময় শ্যামলীর হলি লেন গলিতে এলে তিনি দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭টা ১৫ পর্যন্ত ওই গলির মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ পরে একজন লোক পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। ভিকটিম আনোয়ার শহীদ প্রধান সড়ক থেকে গলিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ওই দুর্বৃত্ত তার দিকে এগিয়ে যায় এবং পকেট থেকে ছুরি বের করে শহীদের পেটে আঘাত করে সরে যায়। শহীদকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি পথচারীরা বুঝতে পারলে ঘাতককে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নিহত আনোয়ার শহীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে জাকির ১২ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। শহীদ অবসর গ্রহণের পর ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পেতে শহীদের সহযোগিতা চায়। শহীদ তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানায়। তিনি বলেন, নিহত শহীদ বছরখানেক আগে পাওনা ১২ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য জাকিরকে চাপ দেন। টাকা লেনদেন সম্পর্কে নিহত আনোয়ার শহীদ ও জাকির ছাড়া কেউ জানতো না। টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় সেজন্য জাকির গত ৫/৬ মাস ধরে শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। 

সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানিয়েছে, সাইফুল এক সময় জাকিরের চালের গোডাউনে কাজ করতো। ৩/৪ মাস আগে জাকির ঢাকায় আসতে বললে সাইফুল ঢাকায় আসে। পরে জাকির সাইফুলকে বলে, একজন লোক আর্থিকভাবে তাকে অনেক বড় ক্ষতি করেছে, তাকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল যদি ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে জাকির সাইফুলকে জায়গাসহ বাড়ি, অর্থ সহায়তা প্রদান করবে এবং আগের দেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে না। শহীদকে হত্যার ধারাবাহিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১১ই নভেম্বর সকালে জাকির ও সাইফুল দিনাজপুর থেকে ঢাকায় এসে কল্যাণপুরে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। হোটেলের কক্ষে বসে জাকির এবং সাইফুল শহীদকে হত্যার সর্বশেষ পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই দিন সন্ধ্যায় পূর্ব নির্ধারিত সময় এবং স্থানে ভিকটিম জাকিরের সঙ্গে দেখা করতে এলে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। হত্যার জন্য তারা ১৮০ টাকা দিয়ে একটি ছুরিও কিনে। হত্যাকাণ্ডের পর জাকির এবং সাইফুল ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলে। রাতে জাকির সাইফুলকে ৬০০ টাকা দিয়ে দিনাজপুরে চলে যেতে বলে। নিজেকে সন্দেহমুক্ত রাখতে শহীদের মরদেহ দেখতে হাসপাতালেও যায় জাকির। সেখান থেকে দিনাজপুরে চলে যায়। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news