তাঁবেদার অপশক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে: তারেক রহমান

তাঁবেদার অপশক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে: তারেক রহমান

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমানে দু’টি বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে, দুই গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এ বিষয়ে তারা আর আপস করতে রাজি নয়। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। গতকাল রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র উদ্যোগে বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, যারা বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ বা সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল- তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনভাবেই গুম, খুন, অপহরণ, দুর্নীতি, লুটপাট্, টাকা পাচারকারী, বর্বর বন্দিশালা আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ। 

ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষনবাড়ীয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলী নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করে তিনি বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিলো, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামীদিনে আর কেউ দেশের ধর্মী জনগোষ্ঠিকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না। আর আগামীদিনে বিএনপির জনগণের রায়ে ইনশাআল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী শাসনে দেড় দশকে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর ও অনাহত ঘটনা ঘটেছে, তার নেপথ্যে কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয়-সর্বধর্মীয় নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠন করার পরিকল্পনা করেছে কিংবা রয়েছে। 

তারেক রহমান বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। বিএনপির এই সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে, সরকারের কার্যকম সম্পর্কে যাতে জনগণের সামনে একটি স্বচ্ছ ধারনা থাকে। একারণেই কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা ও পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে এসেছে, জানিয়ে আসছে।  

তিনি আরও বলেন, সব ধর্মের, সব মতের মানুষ আমরা যাতে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, এজন্য রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক রীতি পদ্ধতির চর্চা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কারণ দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ সহাবস্থান যদি নিশ্চিত করতে হয় তাহলে একটি নিরাপদ মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে গণতন্ত্রবিরোধী যারা তারা অপশক্তি হিসেবে কিন্তু চিহ্নিত।   

তারেক রহমান বলেন, দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশী। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশী হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র  ও সমাজের সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে, এটি বিএনপির নীতি। 

বিএনপির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া প্রমুখ। 

এছাড়া অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাাখেন মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকম, অনিমেষ চাকমা, এডভোকেট নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ত্রিপিটক পাঠ করেন এম শ্রী ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, রাঙাপানি অনাথ শিশু সদন, ভদন্ত সুর্ধম ভিক্ষু, অধ্যক্ষ আর্যসুখ বৌদ্ধ বিহার, ভদন্ত মৈত্রী রতন ভিক্ষু, আনন্দ প্রিয় শ্রমন।