কিয়েভে রুশ হামলায় খুশি নন ট্রাম্প

কিয়েভে রুশ হামলায় খুশি নন ট্রাম্প

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: কিয়েভে রুশ হামলায় খুশি নন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে থেমে যেতে বলেছেন ট্রাম্প। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট করেননি তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের দিকে চালানো ওই হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। কিয়েভে গত বছরের জুলাইয়ের পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এই হামলা শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, তিনি খুব দ্রুতই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন।
তবে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে বিরল এক সমালোচনায় ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, ‘এটি প্রয়োজন ছিল না, সময়টাও খুব খারাপ। ভ্লাদিমির, থামো!’

এই হামলা এমন এক সময়ে হলো, যখন ইউক্রেন এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি হয়েছে—শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রুশ দখল স্বীকার করে নেওয়ার জন্য।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তার ‘কারো প্রতি আনুগত্য নেই’, তার ‘শুধু জীবন বাঁচানোর প্রতি আনুগত্য’ রয়েছে।
পুতিনের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করলেও ট্রাম্প জানান, তিনি এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবেন। দেখবেন চুক্তি হয় কি না—তবে যদি বোমা হামলা বন্ধ না হয়, তাহলে কিছু একটা ঘটবে।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্র আরো শক্ত অবস্থান নিলে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়বে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা মনে করি রাশিয়ার ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করা হলে, আমরা যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি আসব।
’ যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কোনো ছাড় দিতে রাজি কি না? তখন জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসাই একটি বড় ছাড় এবং যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত প্রথম ধাপ।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি রাশিয়া বলে যে তারা যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী, তবে প্রথমেই কিয়েভে এই বিশাল হামলা বন্ধ করতে হবে। ধৈর্য হারাচ্ছে ইউক্রেনবাসী, কারণ আক্রমণের শিকার আমরা, আর কেউ নয়।’ এই হামলার কারণে জেলেনস্কি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে গেছেন।

সিবিএস-এর ‘ফেস দ্য নেশন’ টিভি অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ‘আমরা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু বা সামরিক কাজে ব্যবহৃত বেসামরিক স্থানগুলো লক্ষ্য করি।’ তবে তিনি তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তির কিছু বিষয় এখনও সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে যাতে রাশিয়া সেটিতে সম্মত হতে পারে। 

কিয়েভে হামলার আগে থেকেই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যকার সম্পর্ক আরো খারাপের দিকে যাচ্ছিল—ট্রাম্প ইউক্রেনকে কিছু ভূমি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা শান্তিচুক্তির অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের একটি চুক্তি খুব কাছাকাছি, কিন্তু জেলেনস্কির অনীহা এই চুক্তিকে আরো দীর্ঘায়িত করবে।’

ইউক্রেন বহুদিন ধরেই বলছে, তারা ক্রীমিয়া ছেড়ে দেবে না। ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে এই উপদ্বীপ দখল করেছিল।