আ.লীগের ব্যর্থতা জিয়াউর রহমানের উত্থান: ড. মোশাররফ
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের ব্যর্থতার কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি জানান। "জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস" উপলক্ষে "বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব" শীর্ষক এই আলোচনা সভার করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো ৭ নভেম্বর। যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৭২-৭৫ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। এরপর দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিলো। তাদের নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি। সেসময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিলো। রক্ষী বাহিনীর দ্বারা ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছিলো। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা কারা ঘটিয়েছে এটা পরবর্তী সরকার যারা প্রতিষ্ঠা করেছে সেখানে পরিস্কার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। এরপর ২ নভেম্বর রাত থেকে ৩ রা নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে আরেকটি সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ঘটে। এসময় জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে ও তাকে বন্দি করে। অনেক ঘটনা পাল্টা ঘটনা ঘটে। সেসময় ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ছিলো না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিলো। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিলো।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঠিক সেসময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুটি বিষয় দেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত একটি- জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব। অর্থাৎ দুইটি বিশেষ দিনে জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি ৩-৬ নভেম্বর যখন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা তখনো জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সিপাহী জনতা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই দিনকে গুরুত্ব না দিয়ে "মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস" পালন করছে। আসলে তারা পরিবর্তন সহ্য করতে পারেনা। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সহ্য করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটি আধুনিক উন্নত ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করেছিলেন। অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে শিল্প খাতে বিনিয়োগ করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মানুষকে সংগঠিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন। গ্রাম সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেনাবাহিনীতে আধুনিকায়ন করেন। আজকে আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করছেন। অর্থাৎ যেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা ব্যর্থ। সেখান জিয়াউর রহমান সফল। যার প্রমাণ ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকেও দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে অবৈধ ভোট ডাকাতির সরকার। তারা অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। আমার যেসব বিষয় নিয়ে এতদিন বলে আসছি। আজকে আইএমএফ কিন্তু সেগুলো নিয়ে ঠিকই প্রশ্ন করছে। কেনো তেলের দাম বেড়েছে? কেনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়না? আর আজকে গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী বলছেন দেশে দুর্ভিক্ষ আসবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। কারণ এই সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ। দেশে মানবাধিকার লংঘনের কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের একটি সংস্থা ও র্যাবের কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশে নিতপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এখান থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। আজকে তারা দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের চিন্তা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে লেগে আছে। আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই সরকার এমনিতে যাবে না। আইয়ুব খান যায়নি। এরশাদ যায় নি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিদায় হয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে হবে। পরিবর্তন করতে হলে তাদেরকে সরানোর বিকল্প নেই। তাদের অন্যায় অপকর্মের বিচার দেশের মাটিতে হবে। আসুন আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করি। সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। দেশের মানুষ ভোট দিবে ব্যালটে কোনো মেশিনে নয়।
অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিলো। নান সংকটে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। দেশে চলছিল ক্যু পাল্টা ক্যু। এমনি এক পরিস্থিতিতে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে তার দক্ষ নেতৃত্বে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তার সময়ই দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুসংহত হয়।
ডাঃ মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, ৭ নভেম্বর দেশের ক্রান্তিকালে জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাকে সেসময় গৃহবন্দী করা হয়েছিলো। কিন্তু দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়েছিলো। এর মধ্যেই দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার হয়েছিলো। জিয়াউর রহমান দেশের সাহসী সন্তান। যিনি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকেও দেশের মানুষ বর্তমান হায়েনা সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ ঘটিয়ে ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যখন দেশের মানুষকে ছেড়ে পালিয়েছিলো তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন জিয়াউর রহমান। ঠিক তার পাঁচ বছর পরে দেশে যখন গনতন্ত্র অনুপস্থিত আইনের শাসন ছিলোনা তখনো জিয়াউর রহমান গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরই দেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু আজো দেশে ৭ নভেম্বরের পূর্ববর্তী অবস্থা বিরাজ করছে। এখান মুক্তি পেতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পেশাজীবী সমাজ পাশে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম, ডাঃ মেহেদী হাসান ও ডাঃ সায়ীদ মেহবুব উল কাদিরের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews