আগাম বন্যায় হাওরে পরিস্থিতির অবনতি
উজানের ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ১৮টি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাওরের বোরো ফসল।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের পর উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরের পানি ক্রমেই বাড়ছে। উজানের ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ১৮টি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাওরের বোরো ফসল। এর ওপর দুদিন ধরে সুনামগঞ্জে বইছে ঝড়ো বাতাস, সঙ্গে বৃষ্টিও। এ অবস্থায় যেটুকু ফসল মাঠে আছে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় স্থানীয় কৃষকরা।
এরই মধ্যে প্রশাসনের ঘোষণার পর থেকে ধান কেটে নিতে শুরু করেছেন তারা। যদিও এসব ধান এখনো পাকেনি, ফসল বাঁচাতে আধাপাকা ধানই কাটতে হচ্ছে। কারণ জেলার সবক’টি ফসলরক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। ফলে নতুন ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে সুনামগঞ্জের নদ-নদীগুলোর পানিও বাড়তে থাকবে।
করচার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য হাওরের মতো এ হাওরটিও হুমকির মুখে। এখনো ভালো করে বোরো ধান পাকেনি। হাওরের ভেতরের দিকে কিছু ধান সামান্য পাকলেও ৮০ ভাগ ধান পুরোপুরি পাকেনি। ফসলের মাঠ এখনো সবুজ। এ হাওরের কৃষকরা জানিয়েছেন, আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে এসব ধান কাটার উপযোগী হতে। কিন্তু বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেক কৃষক কাঁচা ধানই কেটে নিতে শুরু করেছেন, যা লোকসানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তাদের।
স্থানীয় কৃষক রাজু মিয়া বলেন, প্রথমে খরায় ধান নষ্ট হয়েছে। এখন বন্যা আসার আগেই ঢলের পানিতে ডুবছে। তিনি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন জানিয়ে এ কৃষক বলেন, সেই জমিতে এখন কোমর সমান পানি। আর একদিন গেলে ধান তলিয়ে যাবে। আবার ধান কাটার জন্য শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। পানিতে হারভেস্টর মেশিন চলে না। চোখের সামনে ধান তলিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুই করার নেই। উপায় না পেয়ে ১২ বছরের সন্তান নিয়ে ধান কাটতে শুরু করেছেন। যেটুকু বাঁচানো যায় তাতেই লাভ বলেও মনে করছেন তিনি।
শাল্লার কৃষক প্রভাংশু দাশ হাওরের প্রায় চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করছিলেন। উপজেলার অনেক হাওর তলিয়ে গেলেও তাদের হাওরটি এখনো অক্ষত। তাই দিন-রাত পরিশ্রম করে ফসলরক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। চলছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ। এখনো ধান পাকেনি। ঢলের দুশ্চিন্তা স্থানীয় কৃষকদের রাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়েছে। সারা রাত তারা বাঁধ পাহারা দেন। এখন কেবল ধান পাকার অপেক্ষা তাদের। পানির ভয়ে কাঁচা ধান কেটে ফেলার কথা জানালেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামের কৃষক স্বপন কুমার বর্মণ। তিনি বলেন, যে হারে পানি বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে একটি হাওরও রক্ষা পাবে না। কারণ অন্তত এক সপ্তাহের আগে আশপাশের কোনো হাওরের ধান পাকবে না। ফলে কেবল অদৃষ্টের অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই বলেও মন্তব্য করেন এ কৃষক।
এদিকে, গতকাল দুপুরে জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাওররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, হাওরে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা দেশের খাদ্যশস্য মজুদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ফলে খাদ্যশস্যের দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা যদি পত্রিকায় অন্যভাবে সংবাদ না করেন, তাহলে ধান-চালের দাম বাড়বে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্যোগ আসতে পারে, আমরা তার মোকাবেলা করব। সবাই মিলে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতিবাজদের আগেও বিচার হয়েছে, এবারো কেউ অনিয়ম করে থাকলে শাস্তি পেতে হবে।
সুনামগঞ্জের হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে জাহিদ ফারুক বলেন, সেখানে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে দুঃখও প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তাদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews