অ্যান্টিবায়োটিক সংকট নিয়ে জানা গেল ‘ভয়ংকর তথ্য’

অ্যান্টিবায়োটিক সংকট নিয়ে জানা গেল ‘ভয়ংকর তথ্য’

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মারাত্মক অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণে আক্রান্ত মানুষের মাত্র ৭ শতাংশেরও কম প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছেন। গবেষকরা সতর্ক করছেন, এই ঘাটতির ফলে মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) আরও ছড়িয়ে পড়ছে।

বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেসে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৫ লাখ কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী গ্রাম-নেগেটিভ (সিআরজিএন) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঘটনা ঘটে এবং এর ফলে প্রায় ৪.৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

কিন্তু এই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ হয়েছে মাত্র এক লাখ ৪ হাজার কোর্স। যা মোট সংক্রমণের গড়ে মাত্র ৬.৯ শতাংশ কভার করেছে। কেনিয়ায় এই হার ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ, আর মেক্সিকো ও মিশরে ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ।

গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (GardP)-এর গ্লোবাল অ্যাকসেস ডিরেক্টর ড. জেনিফার কোহন বলেন, ‘যারা মারাত্মক অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণে ভুগছেন, তাদের অধিকাংশই প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছেন না। এ এক নির্মম বাস্তবতা’।

গবেষণায় বলা হয়, সিআরজিএন সংক্রমণ সাধারণত নিউমোনিয়া, রক্তে সংক্রমণ ও জটিল মূত্রনালী সংক্রমণের মাধ্যমে দেখা যায় এবং এগুলো ক্রমেই বেশি ও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। যদি যথাযথ ওষুধ না দেওয়া হয়, তাহলে এই সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়, মৃত্যুহার বেড়ে যায় এবং প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার আরও বৃদ্ধি পায়।

ড. কোহন ও তার সহকর্মীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও নীতিনির্ধারণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দরিদ্র অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিকের ঘাটতির দিকটি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে নতুন ওষুধ আনা হলেও সবচেয়ে বেশি বোঝা কিন্তু সেই দেশগুলোতে নয়’।

গবেষকেরা ওই ৮টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এতে তারা সিআরজিএন সংক্রমণের অনুমানকৃত সংখ্যা মিলিয়ে দেখেছেন আটটি কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রয় তথ্যের সঙ্গে। এতে দেখা গেছে, রোগ ও চিকিৎসার মধ্যে এক বিশাল ব্যবধান রয়ে গেছে।

এএমআর বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ঘটে তখনই, যখন ব্যাকটেরিয়া ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একে নিয়ন্ত্রণ না করলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি সমতা ভিত্তিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রাপ্তিতে জরুরি বৈশ্বিক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে, যা অনেকটা আফ্রিকায় এইচআইভি চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মতো।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পথে প্রধান বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে—হাসপাতালে ওষুধের সীমিত প্রাপ্যতা, চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় এবং জাতীয়ভাবে ক্রয় ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। ড. কোহন বলেন, ‘আমরা শুধু দরিদ্র দেশগুলোতে সচেতন ব্যবহার এবং ধনী দেশগুলোতে উদ্ভাবন নিয়ে ভাবলে চলবে না। আমাদের একইসঙ্গে দুই দিকেই মনোযোগ দিতে হবে—সব দেশেই’। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন