হাত বদলেই সবজির দাম বাড়ে দ্বিগুণ
ন্যায্য মূল্য পাননা কৃষকরা

প্রথম নিউজ,ঢাকা: নরসিংদীতে উৎপাদিত সবজির খ্যাতি দেশজুড়ে। ইতোমধ্যে শীতকালীন সবজি চাষে পুরোদমে ব্যস্ত কৃষকরা। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবজি উৎপাদন করলেও বাজারে কিন্তু ন্যায্য মূল্য পাননা কৃষকরা। পাইকারি বাজারে কৃষকরা এক কেজি বেগুন বিক্রি করেন ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। কিন্তু এই ৩০ টাকার বেগুনই ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়ে যায় ৬০ থেকে ৭০টাকা।
একইভাবে সব ধরনের সবজির দামই হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। এতে কৃষকরা প্রতিনিয়ত পাইকারি বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মি হচ্ছেন। খুচরা বাজারে সবজির উচ্চমূল্য সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ ন্যায্যমূল্যে শাক-সবজি বিক্রি করতে না পারায় তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রতি মৌসুমেই। শীত বা গ্রীষ্মকালীন আগাম সবজির ক্ষেত্রে কৃষক কিছুটা বাড়তি মূল্য পেয়ে থাকলেও খুচরা পর্যায়ে এসব পণ্য যে দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার তিন ভাগের এক ভাগও পাচ্ছেন না তারা।
কৃষকরা জানান, নরসিংদীতে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায়। এখনাকার কৃষকরা বেগুন, করলা, পটল, শসা, বরবটি, চিচিংগা, ঝিঙা, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, ডাটাশাক, কচু, আলু, ঢেঁড়স, পেঁপেসহ মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত সবজি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর, রায়পুরা উপজেলার জঙ্গি শিবপুর, মরজাল, শিবপুর উপজেলার শিবপুর,পালপাড়া, যোশর, সৃষ্টিগড় ও কোন্দারপাড়া বাজারে বিক্রি হয়। এ বাজারগুলো সপ্তাহের তিন দিন (সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার) হাট বসে। সেখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারা এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় সরবরাহ করা হয়।
সরেজমিনে বেলাব উপজেলার বারৈচা পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটের দিন আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত সবজিচাষী ভ্যান ও রিকশায় করে বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে এসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ বাজারে কথা হয় সবজিচাষী অহিদুল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় দালালদের সঙ্গে হাট বসার আগেই আলোচনা করে একটা দাম ঠিক করে নেন। সেই দামেই পাইকাররা বাজার থেকে সবজি কেনেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের কথা মতো কৃষকদের সবজি বিক্রি করতে হয়। এতে আমরা বাজারে সবজির সঠিক দাম পাই না।’
রায়পুরা উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার কৃষক আবু হাসেম আলী বলেন, ‘সার ও কীটনাশকের দাম আকাশছোঁয়া। এরপরও আমরা সবজি উৎপাদন করি। কিন্তু বাজারে আমাদের কষ্টে উৎপাদিত সবজির সঠিক দাম পাই না। এরচে কষ্টের আর কি আছে।’
জঙ্গি শিবপুর, বারৈচা ও পালপাড়া পাইকারি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। এতে খুচরা বিক্রেতাদের কেজিতে দাম পড়ছে ৩০ টাকা। কিন্তু এই বেগুনই নরসিংদী বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে।
পাইকারি বাজারে পেঁপে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। সেই পেপেই খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতা লাভ করছেন ২১ থেকে ২২ টাকার মতো।
এই বাজারগুলোতে করলা প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকায়। খুচরা বাজারে গিয়ে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কাকরল প্রতিমণ পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। চাল কুমডা ১০০ পিস পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews