সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের খোয়া, কাজ বন্ধ করল এলাকাবাসী
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজে ১ নম্বর ইটের খোয়ার স্থলে ৩ নম্বর ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করছে।

প্রথম নিউজ, রংপুর : রংপুরের কাউনিয়ায় মীরবাগ-হারাগাছ সড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে শনিবার (৩ জুন) দুপুরে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় জনগণ।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমফান প্রকল্পে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার মীরবাগ থেকে হারাগাছ বাংলাবাজার বাঁধের পাড় পর্যন্ত ৬ দশমিক ৬৩২ মিটার রাস্তা সম্প্রসারণ ও সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাম্মী বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজে ১ নম্বর ইটের খোয়ার স্থলে ৩ নম্বর ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করছে। শনিবার খানসামা জামতলা বাজার এলাকায় স্থানীয় লোকজন নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। বেশি লাভের আশায় ঠিকাদার এমন কাজ করছে বলে জানায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা প্রকৌশলী। পরে তার উপস্থিতিতে স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদের মুখে রাস্তা থেকে নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা।
খানসামা জামতলা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন রাস্তায় ফেলা হয়েছে নিম্নমানের ইটের খোয়া। রাস্তার দুই পাশে বিছানো হয়েছে ইট। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। জামতলা গ্রামের বাসিন্দা আলী বলেন, দীর্ঘ একযুগ পর এই রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু সঠিকভাবে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে না। নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে রাস্তাটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না।
একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সকালে এসে দেখি ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের ইটের খোয়া ফেলছে। এছাড়া রাস্তার দুই ধারে এজিনে নিম্নমানের ইট বিছানো হয়েছে। এখনই গাড়ি চলাচলে ইট ভেঙে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এলাকাবাসী নিম্নমানের কাজের বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন আমাদেরকে দেখে নেওয়ার ভয়-ভীতি দেখায়। রাস্তায় চলাচলকারী শফিকুল ইসলাম ও সুমন বলেন, পুরাতন রাস্তার কার্পেটিং ও রাস্তার খোয়া আলগা করে তা মিশিয়ে রাস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। পরে সেগুলো রোলার দিয়ে পিষে সমান করা হয়। সেই সঙ্গে কিছু স্থানে অত্যন্ত নিম্নমানের ডাস্ট খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রসারিত কিছু স্থানে ঠিকভাবে খনন এবং রোলার করা হয়নি। ইতিপূর্বে কোনো রাস্তা এভাবে নির্মাণ করতে দেখেননি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। মীরবাগ-হারাগাছ রাস্তায় নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের করা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে শনিবার বিকেলে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের সত্যতা পান। পরে ঠিকাদারের ম্যানেজারকে নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তা থেকে নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং এজিনে বিছানা নিম্নমানের ইট সরানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুরাতন রাস্তার কার্পেটিং তুলে ফেলে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা ব্যবহারে রাস্তা শক্ত হয় এবং এর ওপরে ৪ ইঞ্চি ইটের খোয়া বিছানো হবে। এরপর কার্পেটিং করা হবে। আর ডাস্ট খোয়াগুলো ভালো ফিনিশিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।