শীতের মধ্যেই কেন নির্বাচন চায় বিএনপি-জামায়াত?

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গেলো বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব এমনটা জানানো হয় বিএনপির তরফে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী আগামী রমজানের আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চাইছে। যেখানে সরকারের টাইমলাইন ডিসেম্বর থেকে জুন। চায়ের আড্ড থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানেই এখন এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
বাংলাদেশের স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় যে কোনো নির্বাচনই একটা উৎসবের মতো। সাধারণত দেশে নির্বাচন হয় শীতকালে। বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ কয়েক মাসের মধ্যে।
বিএনপির মতো প্রভাবশালী দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়ার কারণ হিসেবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে।
নির্বাচনের সময়সীমার ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা ডিসেম্বরের কথাই বলা হয়েছে। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এ কথা বলেননি যে ডিসেম্বরে হবে না। কিন্তু জুন পর্যন্ত নিয়েছেন। আমরা এ কথা পরিষ্কার করে বলেছি আওয়ার কাট আউট টাইম ইজ ডিসেম্বর।’
এ বছরের ডিসেম্বরের আগে সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেও হতে পারে। যে সংস্কারগুলো নিয়ে ঐকমত্য হবে, সেটা ১৫-২০ দিন বা এক মাসের মধ্যে করে ফেলতে পারবে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী চায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি এমনকি মধ্যে ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন। না হলে সেটা জুনের পরে চলে যাওয়ার যে আশঙ্কা করছে দলটি।
আগামী বছর রমজান শুরু হবে ১৭ কিংবা ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে। জামায়াত এখন সেই রমজান শুরুর আগেই ভোটের কথা বলছে।
আগামী রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় বলেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কথা বলছে, আমরা এতো দেরিতে নির্বাচন চাই না। আগামী রমজানের আগে (ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রমজান শুরু) আমরা নির্বাচন চাই।
এদিকে, আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন করে কর্মসূচির কথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগেই বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুন এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। গেলো বুধবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম থেকে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুন মাসে ইলেকশন করবো তা নয়, ডিসেম্বর থেকে জুনের মানে হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যদি ডিসেম্বরে সম্ভব হয় তাহলে ডিসেম্বরেই না হলে জানুয়ারিতে, আমরা ক্ষমতায় থাকার জন্য দেরি করবো মোটেই তা নয়।’
বাংলাদেশে মূলত শীতকালে নির্বাচন হলেও গ্রীষ্মকালে যে নির্বাচন হয়নি তেমনটা নয়। তবে এর উদাহারণ আছে মাত্র দুটি। একটি ১৯৮৬ সালে, আরেকটি ১৯৯৬ সালে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচন হয় এর কয়েকমাস আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারণে।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং সদ্য সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনে গ্রীষ্মের মধ্যেও নির্বাচনের নজির আছে। কিন্তু শীতকাল হচ্ছে আদর্শ সময়। একটা ইলেকশন করতে গেলে অনেককিছু বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, স্কুল ফ্রি পাবো কি না, শিক্ষকরা ফ্রি থাকবেন কি না। কারণ ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্র হিসেবে স্কুল এবং কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষক লাগে। ফলে ক্লাস-পরীক্ষার সময় ভোট হলে এটা শিক্ষার জন্য সহজ হবে না।
দ্বিতীয়ত, বড় ধরনের কোনো উৎসব আছে কি না। যেমন, রমজান কিংবা ঈদ থাকলে সেটা বিবেচনা করতে হয়। তৃতীয়ত, আবহাওয়া দেখতে হয়। বৃষ্টিতে হাওর এলাকা তলিয়ে যায়, বন্যা কিংবা বৃষ্টির কারণে প্রচারণা তখন কঠিন। আবার গরমেও ভোটারদের সমস্যা।
তবে তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বা দলগুলো কী চায়। গরমে যে নির্বাচন করাই যাবে না তেমনটাও নয়।
রাজনৈতিক দল বিশেষত, বিএনপির তরফে ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন পিছিয়ে গ্রীষ্মকালে না নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে গেলে আরও কিছু জটিলতা আছে। কারণ আগামী বছর রমজান শুরু হবে মধ্য ফেব্রুয়ারির পরে। রমজান চলবে মধ্য মার্চ পর্যন্ত। এরপর কয়েকদিন ঈদুল ফিতরের ছুটি।
এপ্রিল মাসে হওয়ার কথা এসএসসি পরীক্ষা। এ সময় নির্বাচন হলে পরীক্ষা পেছাতে হবে। এপ্রিলের পর মে মাসে আবার ঈদুল আজহা। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কোরবানি ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। ফলে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত দুই থেকে তিন মাসের সময় প্রয়োজন, সেটা বের করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছরের শুরুতেই ভোট না হলে সেটা জুনের পরে চলে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা