রংপুরে চিকিৎসার অবহেলায় হাসপাতালে একদিনে ৪ নবজাতকের মৃত্যু

এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে চিকিৎসক, ব্যবস্থাপকসহ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

রংপুরে চিকিৎসার অবহেলায় হাসপাতালে একদিনে ৪ নবজাতকের মৃত্যু

প্রথম নিউজ, রংপুর: রংপুর নগরীতে চিকিৎসার অবহেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে একইদিনে ৪ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে চিকিৎসক, ব্যবস্থাপকসহ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। পুলিশ রাতেই হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। জানা যায়, দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে নগরীর বাংলাদেশ বেতার সংলগ্ন রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতাল চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এনআইসিইউতে নবজাতকদের চিকিৎসার নামে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করে আসছিল হাসপাতালটি। কুড়িগ্রাম জেলার খলিলগঞ্জের আশিকুর রহমানের স্ত্রী সাথী বেগম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যমজ বাচ্চা প্রসব করেন। জন্মের পর নবজাতকদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকরা এনআইসিইউতে চিকিৎসার কথা জানান। সরকারি এ হাসপাতালে এনআইসিইউ সংকট থাকায় তারা দালালের মাধ্যমে গত ২১শে আগস্ট রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতালে নবজাতকদের ভর্তি করে। গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসক জানান, মেয়ে নবজাতক দুর্বল হলেও ছেলে নবজাতক ভালো রয়েছে। শুক্রবার সকালে ছেলে নবজাতককে কেবিনে মায়ের কাছে দেয়ার কথা ছিল। এজন্য আশিকুর সকাল থেকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ছেলের খোঁজখবর নিতে থাকেন। 

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নবজাতককে এনআইসিইউ থেকে কেবিনে দেয়ার পরিবর্ততে আশিকুরকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে আশিকুর তার নবজাতককে কাছে পেতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয় এবং থানা-পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার কথা জানায়। এরপর সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে তার ছেলে নবজাতক মারা গেছে। তবে কন্যা নবজাতক এখনো জীবিত রয়েছে। এ খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে আশিকুরের পরিবার। রাত ১০টার দিকে চিকিৎসায় অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্বজনরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে আসলে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। নবজাতক শিশুদের চিকিৎসা দেন নার্স ও আয়া। এ ছাড়া একাধিক রোগীকে ভুল প্রেসক্রিপশন দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ করেন তারা। এদিকে শুক্রবার সকালে হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রংপুর ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার, ববিতা রানী, জবা রানী’র নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তারা সকালে নবজাতকের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে একটু দুর্বল থাকলেও ছেলে নবজাতক সবল ছিল। ডাক্তারও বলেছে শুক্রবার আপনার বাচ্চাকে কেবিনে দেয়া হবে। আমি একাধিকবার বলার পরও শুক্রবার সকাল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবিনে বাচ্চা দেয়নি। বরং তারা এনআইসিইউ’র বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। সন্ধ্যায় আমার সন্দেহ হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বললে কর্তৃপক্ষ আমায় জানায় ছেলে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এখানে কোনো চিকিৎসা নেই। তাই কন্যাকে বাঁচাতে তাকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। বগুড়া থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ইমরুল কায়েস বলেন, আমার নবজাতকের শ্বাসের সমস্যা রয়েছে। জানতে পারলাম এ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয়। কিন্তু বাচ্চা ভর্তির পর থেকে দেখি ডাক্তার ঠিকমতো আসে না। ডিউটি ডাক্তারও থাকে না। মোট কথা চিকিৎসার কোনো পরিবেশ নেই। এনআইসিইউতে নবজাতককে রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার চাই। পঞ্চগড় থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহিদুল্লাহ বলেন, এখানকার ডাক্তাররা আমাকে ভুল প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছিল। আমি সেই অনুযায়ী ওষুধ নিয়ে এসে তাদের দিয়েছি। পরে আমি ওই ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করি বাচ্চার চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন ঠিক ছিল কিনা। পরে তারা জানায়, প্রেসক্রিপশন ভুল হয়েছে ওষুধগুলো দোকানে ফেরত দেয়ার কথা বলেন। এমন অনিয়ম চলছে এখানে। হাসপাতালের অনিয়ম অস্বীকার করে সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার রয়েছে এবং সকল রোগী চিকিৎসা পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন নবজাতক এনআইসিইউতে মারা গেছে। তাদের শারীরিক সমস্যা ছিল। এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সরদার বলেন, শুক্রবার রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, রংপুর নগরীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে অভিযান চলছে।