রাতের আঁধারে বেনজীরের খামার থেকে ৩৬ গরু উধাও

বুধবার (৫ জুন) রাতে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়ার বেনজীরের গড়ে তোলা খামার বাড়িতে এসব ঘটনা ঘটে। 

রাতের আঁধারে বেনজীরের খামার থেকে ৩৬ গরু উধাও
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোচিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্ষমতার থাকার কালীন অবৈধ পন্থায় দেশ-বিদেশে কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। বান্দরবানেও বেনজীর আহমেদে তার স্ত্রী ও মে‌য়ের নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি সন্ধান মিলেছে।
 
জানা গেছে, সেখানে একটি প্রায় ৭০ একর জায়গা জুড়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন খামার বাড়ি। ওই বাগানে মা‌ছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফ‌লজ বাগানসহ দুই তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক রেস্টরুম রয়েছে। সেখানে সুন্দর পরিসরে অবকাশ যাপনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করা হলে, এতে নজরে আসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সেই সম্পদের খোঁজ নিতে অবস্থান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমন খবর পাওয়ার পরপরই তার খামার থেকে রা‌তের আঁধা‌রে ৩৬টি গরু স‌রিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কো‌টি ৫০ লাখ টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে।  
এসব গরু সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে‌ছে দীর্ঘদিন ধরে বেনজীর আহ‌মে‌দের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লী‌গের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিংয়ের বি‌রুদ্ধে। বুধবার (৫ জুন) রাতে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়ার বেনজীরের গড়ে তোলা খামার বাড়িতে এসব ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, দুটি ট্রাকে যোগে রাতে আঁধারে ওই খামার থে‌কে ৩৬টি গরু নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তারা মনে করছেন, দুদকের কাছে তথ্য গোপন করতে খামার থেকে গরুগুলো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে খামার বাড়ির দা‌য়ি‌ত্বে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা মং ওয়াই চিং।  
 
গরু সরানোর বিষয়টি স্বীকার করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিং জানান, গরুগুলো মালিক তিনি। এবং তার নিজের বাগানে লালন পালন করা হচ্ছে। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে গরু বিক্রি হয়েছে, গরুগুলো আমার এবং খামারটি আমার। বেনজীর এই বিষয়ে জড়িত নয়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতার থাকাকালীন সময় বান্দরবান সদর থেকে ৭ কিলোমিটার সুয়ালক মা‌ঝের পাড়ার বাজারে পাশে চা অফিস থে‌কে ১‌ কি‌লো‌মিটার দূ‌রে প্রায় ৭০ এক‌রের জ‌মি‌ দখলের নেন সাবেক র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। জানা গেছে, জায়গাটি ২০১৬ সালে বেনজীর আহ‌মেদ, তার স্ত্রী ও মে‌য়ের না‌মে লিজ নেওয়া। পুরো এলাকা জুড়ে গরুর খামার, ক‌য়েক‌টি মা‌ছের প্রজেক্ট, এক‌টি দুতলা রেস্ট রুম, বিভিন্ন ফলজ ও সেগুনবাগান। সেখানে রাবার হর্টিকালচারের জায়গা লিজ ও ক্রয়কৃত জায়গাও রয়েছে। ওই জায়গা দেখিয়ে গত বছর বন বিভাগ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ঘনফুট গাছের জোত (কাঠ পরিবহন) পারমিট করেন বেনজীর। প্রায় কো‌টি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় গাছ বিক্রি করে। 
অপরদিকে, বান্দরবানে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নেও বেনজীরের আরও প্রায় ৫৫ একর জায়গার খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, তৎকালীন সময়ে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় বেশ কিছু নেতা বেনজীরের নাম ব্যবহার করে প্রচুর সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে এসব দখলকৃত জায়গা-জমি তাদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
 
এ ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বেনজীরের সম্পত্তি নিয়ে ইতোমধ্যে দুদক থেকে চিঠি দেওয়ার পর বান্দরবানে থাকা তার সম্পত্তির হিসাব পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে সম্পত্তির আরও খোঁজ পাওয়া গেলে সেটিও জানানো হবে জানান এই কর্মকর্তা।