মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা: রিজভী

তিনি বলেন, এবারের ঈদে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশবাসীকে।

মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে পাল্লা দিয়ে। বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন সেটি একেবারে শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয় একসময় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাহেব বলেছেন, অষ্ট্রেলিয়াতে নাকি ১০ ঘন্টা বা কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ১৮ ঘন্টা লোডশেডিং হয়। অষ্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের এই মন্ত্রী এই উদ্ভট খবরটি পেলেন কি করে ? সত্যি বিষ্ময়কর যে, এই অবৈধ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে ‘আবোল-তাবোলের’ দেশ বানাতে চাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় এরা জন্মগতভাবেই মিথ্যেবাদী একটি রাজনৈতিক দল। অসত্য কথা, মিথ্যাচার, অপবাদ, কুরুচিপূর্ণ কথার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতা হলে সেখানে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ান হবে। একটি উন্নত গণতান্ত্রিক সুপরিচিত দেশ অষ্ট্রেলিয়া। অষ্ট্রেলিয়ায় বিদ্যুৎ কত ঘন্টা থাকে না থাকে এটা বিশ্ববাসী জানে। আওয়ামী মন্ত্রীরা এধরণের টাটকা মিথ্যা কথা বলে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণকে প্রতারনা করার জন্য। বর্তমান ভয়াবহ লোডশেডিংকে জায়েজ করার জন্য হরেক কিসিমের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা। জনগণের সমর্থন হারিয়ে অবৈধ আওয়ামী সরকার হিংসা, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, হরিলুট, করোনাকালে দূর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রুপ, রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপজ্জনক ধ্বস, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ সংকট, নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, আমদানী রপ্তানীতে হাজার হাজার কোটি ডলারের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সে জন্য দায়ী হচ্ছে তাদের নিজেস্ব স্বার্থসর্বস্বতার উর্ধ্বে উঠতে না পারা। তাই এখন মিথ্যা বলা আওয়ামীলীগের ডিএনএতে মিশে গেছে। তবে এই কারণে দেশে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিনতি কি হবে তা বলা মুশকিল। গুম, খুন, ক্রস ফায়ার, কন্ঠরোধসহ গণতন্ত্রহীনতায় তারা মিথ্যার যে প্রতিকুল পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে উৎকৃষ্ট রুচিশীলতা বিদায় নিয়েছে।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতু, ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেল নিয়ে তথাকথিত ভুয়া উন্নয়নের কল্পরাজ্য তৈরি করতে নানা নাটক দৃশ্যমান করে যাচ্ছে সরকার । প্রখ্যাত কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত তাঁর শর্মিষ্ঠা নাটকে বলেছেন ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে/মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে’ রাঢ়বঙ্গে কি হয় তা জানিনা, তবে এই বঙ্গে তথা বাংলাদেশে আওয়ামী অলীক কুনাট্যের রমরমা মঞ্চায়ন সর্বত্র প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে। এই ধরনের অনির্বাচিত লুটেরা শাসকদের বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে বিশেষ দূর্বলতা থাকে। এতে যেমন ঢাকডোল পিটানো যায় আবার হরিলুটও করা যায়। বিদেশি ঋণে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণের এমনকি ছোট শিশুর ঘাড়েও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ঋণের বোঝা। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানোনোর কতইনা বাহাদুরির গল্প শুনাচ্ছেন শেখ হাসিনা অথচ গত ১৪ বছরে চীন, জাপান ও ভারতের কাছ থেকে উঁচ্চ সুদে বিপুল অঙ্কে ঋণ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি না করে প্রধামন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনদেরকে কুইক রেন্টাল স্থাপনা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র জনগণের টাকা লুটের জন্য। তা এখন অক্ষরে অক্ষরে প্রমানিত হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্প খাতে হরিলুট নিশ্চিত করতে এবং কেউ যাতে এই বিষয়ে উঁচ্চবাচ্য করতে না পারে সেজন্য করা হয়েছে দায়মুক্তি আইন (ইনডেমনিটি)। বলা হয়েছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া হবে অথচ সেই বিদ্যুৎ কালবৈশাখীর ঝড় উঠলে শুধুমাত্র আকাশে দেখা যায় বাস্তবে বাসা-বাড়িতে ও শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে, যায়না। বর্তমানে রাজধানীর ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে রাতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। দেশের  অর্থনীতিরি মস্তবড় বিষফোঁড়া এই কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে এই প্রকল্প দেশকে নিয়ে গেছে দেওলিয়াত্বের দিকে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিদ্যমান শ্রীলঙ্কাতেও প্রথমে শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ সংকট, তারপর সেখানে কি ঘটেছে দেশবাসী তা জানেন। বাংলাদেশেও উন্নয়নের নামে হরিলুট করে দেশ থেকে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে ফোঁকলা করে দেয়া হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে পাল্লা দিয়ে। বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন সেটি একেবারে শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। উৎপাদনের রাজনীতি না করে সরকার আমদানী মুখি হলে এই অবস্থাই হয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাস উত্তোলন না করেও তারা আমদানীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এখন কয়লা, গ্যাস সহ জ্বালানী সংকটে দেশে বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শ্রীলঙ্কায় একটি পরিবার ক্ষমতায় থেকে কিভাবে উন্নয়নের নামে দেশটিকে বিপজ্জনক খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছিল, এখন তাদেরকে প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবছর ধরে কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে যা মূূলত একটি পরিবারের আধিপত্যই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ কোন অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বাংলাদেশেও সবকিছু লুটপাট করে দেশের সব টাকা সুইচ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে পাচার করার পর সরকার প্রধান এখন জনগণকে সঞ্চয়ী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব করে প্রতিনিয়ত তারা লোক হাসানোর পাত্র হচ্ছেন। এরা ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেশবাসী শঙ্কিত। ভবিষ্যত নির্বাচনেও একতরফা নির্বাচন করবে সেজন্য তারা পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালাবে- তার আলামত ফুঁটে উঠছে। কিন্তু এবার তারা সফল হবে না।

তিনি আরো বলেন, এবারের ঈদে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশবাসীকে। সড়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাঝে মধ্যে মিডিয়ার সামনে এসে বিএনপিকে নিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। কিন্তু ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ঈদের প্রাককালে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়েছে জনগণকে। সড়কে দূর্ভোগের সীমা ছিলনা। ৫ ঘন্টার পথ ৩০/৩২ ঘন্টায়ও শেষ হয়নি। যাত্রীদেরকে দিনরাত।  যাত্রীদেরকে দিনরাত কাটাতে হয়েছে সড়ক-মহাসড়কে।  মন্ত্রীরা বলেছেন মহাসড়কে কোন যানজট নেই। অথচ অনেক মানুষকে ঈদ করতে হয়েছে রাস্তাতেই, কেউ ঈদের দিন দুপুরে বাড়িতে পৌঁছতে হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের মস্তিস্ক কোষ থেকে সত্য হারিয়ে গেছে। ঘরমুখো মানুষকে ভয়াবহ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আর ছিল সড়কে মৃত্যুর মিছিল। এর জন্য দায়ী আওয়ামী প্রশাসন ও সড়ক মন্ত্রী।
গ্রেফতার ঃ
ভোল জেলাধীন লালমোহন উপজেলা বিএনপি’র সদস্য ও ধলিগৌরনগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন নসুকে গত ৮ জুলাই রাত ৩ ঘটিকার সময় তার বাসা থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।