বহির্বিশ্বে সরকারের ‘গণতন্ত্রের’ মুখোশ খুলে গেছে

মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

বহির্বিশ্বে সরকারের ‘গণতন্ত্রের’ মুখোশ খুলে গেছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার এতদিন বিদেশিদের কাছে ‘উন্নয়ন গণতন্ত্রের’ বুলি আওড়াতো। কিন্তু বিদেশিরা এখন বুঝে গিয়েছে- বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন নেই। তাদের কাছে সরকারের গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে গেছে। বাংলাদেশে তারা সত্যিকারের গণতন্ত্র দেখতে চায়। সে কারণেই বিদেশিরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আর এতেই সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে বিদেশিদের বিরুদ্ধে নানা উল্টাপাল্টা কথা বলছে। কিন্তু এতে লাভ হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তাদের নির্বাচন দিতেই হবে। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি’র অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবজমিনকে দেয়া  সাক্ষাৎকার হুবুহু তুলে ধরা হলো।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তার কারণটি হলো- আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখেছি ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখেছি। সরকার এদেশে কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে সেটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। সর্বশেষ একটি উদাহরণ দেখুন- আজ থেকে কয়েক মাস আগে কয়েকটি উপনির্বাচন হয়েছে। উপনির্বাচনে এমন কোনো স্টেইক নেই যে গায়ের জোরে করতে হবে। সেখানেও শতকরা ৫ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের কথাও যদি ধরেন- ১০-১২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তাহলে প্রমাণ হয় দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারের এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটাই হচ্ছে আজকে সত্য। এই সত্যকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, আজকে বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে পারে না।

সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের ব্যাপারে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। আমাদের দায়িত্ব আছে বলেই আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলন করছি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার যে হরণ করেছে সেটা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। এই দায়িত্ব পালনের জন্যই আমরা বলেছি- বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দেশের সমস্ত মানুষ এই সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তারা কোনো অবস্থায় বিশ্বাস করে না এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগের সমর্থক যারা আছে তাদের যদি নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকতো তাহলে উপনির্বাচনে তাদের লোকজন ভোট দিতে গেল না কেন। 

বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই শীর্ষনেতা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল ব্যালট দিয়ে নির্ধারিত হয় না, নির্ধারিত হয় চারটি বাটন দিয়ে। সেগুলো হলো- ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসি। এই চারটি বাটনে রাজধানী থেকে টিপ দেয়া হয় এবং নির্বাচনের ফলাফল বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রিন্ট আউট বের হয়। সরকার যদি একতরফা নির্বাচন করে ফেলে তাহলে বিএনপি কী করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, বিএনপি স্পষ্ট বলে দিয়েছে এ ধরনের পাতানো নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি এ দেশের জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনবে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। 

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধ্য হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই নেতা বলেন, সরকার বাধ্য হবে কিনা সেটা সরকারের বিষয়। কিন্তু আমরা কী প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করবো এটা আমাদের বিষয়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি- আমাদের আন্দোলন হলো এদেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। এর জন্য যে পথ আমরা অবলম্বন করছি সেটা অবশ্যই গণতান্ত্রিক উপায়ে। সে কারণেই আমরা ১০০ ভাগ গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এছাড়া মানুষের যে সুস্থ চিন্তা-চেতনা সেটার ওপর আমরা আস্থা রেখেছি। তাতেই দেখবেন সুফল আসবে এবং বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। তার প্রমাণ আমাদের কর্মসূচিগুলোতে ৫ লাখ, ৭ লাখ লোক অংশ নিয়ে প্রতিবাদ করছে। আমি বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে সুফল আসবে। আর আমরা সেই কাজটাই করছি।

সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সভ্য দেশে সভ্য প্রক্রিয়ায় কাজ হয়। আমাদের দেশে অন্যায় যে কাজগুলো হচ্ছে সেটার জন্য তারা যে বিধিনিষেধ দিয়েছে সেটাই সুস্থ প্রক্রিয়া। আশাকরি সরকার বুঝতে পারবে- এ ধরনের একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ব্যতিরেকে বিরোধী দলগুলোর ওপর যেভাবে দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে সেভাবে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে সেটা মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্ধারিত ছিল। আজকে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ বাহিনী যাই বলুন না কেন তারা যে কাজটা করছে সেটা কোনোদিন দেশের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। সে ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর হতে পারে। বুঝতে পারছি, তারা লক্ষ-হাজার কোটি টাকা এদেশ থেকে লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বিদেশে বেগমপাড়া বানিয়েছে। সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে।