ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট: বিএনপি

এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এ বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ 'বাস্তবতা বর্জিত' একটি বাজেট, এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।

ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট: বিএনপি
বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার গুলমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ৯ জুন বৃহ¯পতিবার আমি বলেছিলাম বর্তমান ভোট-চোর গণবিরোধী সরকারের বাজেট উত্থাপনের কোন অধিকার নেই। কেননা এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং তাদের দেওয়া বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কিছু নেই। আজ আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি এ ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার জোর করে জগদ্দল পাথরের মতো ক্ষমতায় চেপে থেকে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দেশ চালাতে গিয়ে, বিশেষকরে পাচার হয়ে যাওয়া অবৈধ অর্থ-সম্পদকে বৈধতা দেয়ার লাইসেন্স দিয়ে পুরো দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি করছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে। নিশিরাতের ভোটডাকাত এই সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছে সেটা কোনো অর্থেই সাধারণ জনগণের বাজেট নয়। এটা স্রেফ “ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট”। কারণ পাচারকারীদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো পরিস্কার অর্থে বললে, সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচার করার সুযোগ করে দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য হ্রাসের কোন কার্যকরী কৌশল না নিয়েই শুধু মাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্য এই বাজেট প্রণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলতেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশটা আমাদের সকলের। দেশ ভালো থাকলে আমরা সকলে ভালো থাকবো। কিন্তু এ বাজেটে লুটের টাকা বিশেষকরে বিদেশে পাচার করা অবৈধ অর্থকে সামান্য কিছু করের বিনিময়ে বৈধতা দিয়ে দুর্নীতির দুয়ার অবারিত করা হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইন ও আমাদের দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী। সরকার এর মাধ্যমে “দুষ্টের পালন, শিষ্টের দমন” নীতি গ্রহণ করলো। এটা সুশাসন ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি “সামাজিক ন্যায় বিচার” বিরোধী। আর তাই দেশবিরোধীও বটে। এই বাজেট প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা বৈধ করার ম্যাজিক বক্স। কর দিয়ে এসব অর্থ বৈধ হয়ে গেলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোন কর্তৃপক্ষ। বিদেশে অবস্থিত যে কোন সম্পদের উপর কর পরিশোধ করা হলেও আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর উপর ১৫%, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০% ও বাংলাদেশে পাঠানো রেমিটকৃত নগদ অর্থের ওপর ৭% কর আরোপের মাধ্যমে তা বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের যুক্তিতে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ বৈধ করার প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে রাজ ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক সুযোগ সৃষ্টি করবে। অর্থ পাচারকারীরা আরো উৎসাহী হবে। যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত, সেখানে তাদের এ অর্থ-সম্পদ বৈধ করে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সাথেও সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক বটে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গর্হিত এই অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল। কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের যে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, এ সুযোগে কালো টাকার মালিকরা বাজার থেকে যে কোন অংকের বিনিময়ে ডলার কিনে কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করে এ ঘোষণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামান্য কর পরিশোধ করে তা বৈধ করার প্রয়াস পাবে। এতে ডলার মূল্যে অস্থিরতাও আরও বৃদ্ধি পাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ট লোকজনই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। এখন এ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ঐ সব পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ করে দিল। এর আগেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যে কোন মানদণ্ডেই অগ্রহণযোগ্য। পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দিলে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁরা হতাশ হবেন। যাঁরা সৎভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এর ফলে পি. কে. হালদারের মত বিদেশে পালিয়ে থাকা কেউ একজন যদি কর দিয়ে কালো টাকা নিয়ে আসে তাহলে তাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না। এতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। টাকা পাচারকারীরা উৎসাহিত হবে। ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে এবং প্রতিবছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে যানা যায়। কানাডার বেগম পাড়া অনেক আলোচিত। সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল, দুবাই আলিসান বাড়ি করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নগদ অর্থ রেখেছেন অনেকে। নিউইয়র্কে মন্ত্রীদের বাড়ি ও উপদেষ্টাদের বিলাসবহুল একাধিক বাড়ির কথাও বহুল আলোচিত। সম্প্রতি পিকে হালদারের ঘটনা আরো রোমাঞ্চকর। আর কত পিকে হালদার দের তথ্য অনাবিষ্কৃত রয়েছে তা কেবল বিধাতাই জানেন। সরকার এদের সকলের পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিল। নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা প্রদান। অথচ অর্থ পাচার রোধ আইন অনুযায়ী অর্থ পাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচার করা অর্থ বাজেয়াপ্ত এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। অর্থ পাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এটা অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি স্বাধীনতার মূলস্তম্ভ সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন ও সুশাসনের পরিপন্থী। আমি পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার এ ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এটি বাতিল করার জোর দাবী জানাই। অনতিবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
পদ্মা সেতু সর্ম্পকে তিনি বলেন, ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে কিভাবে বর্তমান সরকারের সময় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা এবং রেল সংযোগের কারণে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকলো জনগণ তা জানতে চায়। পদ্মা সেতু পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল সেতু। ভারত ও চীনের তুলনীয় দৈর্ঘের সেতুর জন্য যে ব্যয় হয়েছে সে তুলনায় এ অর্থ দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। বলা হচ্ছে কোন অর্থই বিদেশ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হয়নি। প্রশ্ন হল ঠিকাদারকে যদি  বাংলাদেশ মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করা হয় তাহলে সেতু নির্মাণে ডলারের বিনিময়ে আমদানিকৃত পণ্য কিভাবে আনয়ন করা হয়েছে, অথবা ঠিকাদার তার লভ্যাংশ কোন মুদ্রায় তার দেশে নিয়ে যাবেন। মূলতঃ সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে মর্মে মানুষ বিশ্বাস করে। জনগণকে প্রকৃত সত্য জানান হোক। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছ সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছর পর্যন্ত এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে কি কোন ঋণ নেয়া হয়েছে? হলে তার সুদহার ও ঋণের শর্ত স¤পর্কে জনগণ জানতে চায়। জনগণ জানতে চায় বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার নামমাত্র সুদের ২৩৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এর অনুমোদিত ঋণ বাদ দিয়ে সরকার কার স্বার্থে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ডামাডোলে জনগণকে এই বিপুল অংকের টাকায় তাদের স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ নানামুখী জনকল্যাণমূলক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করলেন। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চমহলের সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির প্রমান পাওয়ায় ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকসহ সকল দাতা সংস্থা পদ্মা সেতুতে তাদের অঙ্গীকারকৃত ২৩৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাতিল করে। দুর্নীতি বিষয়ক সকল তথ্য ২০১১ সালে দুদকে পাঠানোর পরও বাংলাদেশ সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিশ্বব্যাংক তাদের প্রদত্ত নামমাত্র সুদের ১২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ বাতিল করতে বাধ্য হয়। [ডড়ৎষফ ইধহশ ঝঃধঃবসবহঃ ড়হ চধফসধ ইৎরফমব, ২৯ ঔঁহব ২০১২, যঃঃঢ়ং:/িি/.িড়িৎষফনধহশ.ড়ৎম]. পরবর্তীতে অন্যান্য দাতা সংস্থাও একইভাবে তাদের প্রদত্ত ঋণও বাতিল করতে বাধ্য হয়। এর ফলে নামমাত্র সুদের বিদেশি অর্থের পরিবর্তে বড়াই করে নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে প্রকৃত অর্থে এ দেশের জনগণকে ঠকানো হলো, কেননা এই অর্থ দিয়ে জনগণের কল্যাণে নানাবিধ জনকল্যাণমূলক কার্যাদি স¤পাদন করা যেত যা থেকে তারা বঞ্চিত হলো, অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রদত্ত ঋণ সুবিধা নিয়ে পদ্মা সেতুও নির্মিত হতো।  বিশ্বব্যাংকের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা গেলে দুর্নীতির কোন সুযোগ থাকতো না কেননা বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীরা সেতু ব্যয় কঠোরভাবে মনিটরিং করতো। এক্ষণে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহজ শর্তের ঋণ পরিহার করে গোঁড়ামি করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলাদেশসহ সকল স্বৈরশাসকদের এই ধরনের প্রকল্পেই আগ্রহ বেশি। পূর্বেই বলেছি নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং হবে তা দিয়ে অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ স¤পাদন করা যেত। কিন্তু জবাবদিহিহীন সরকারের তাতে কিছু যায় আসে না। তারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণের মনোজগতে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের আবেগময় আবহ সৃষ্টির প্রচেষ্টার আড়ালে মানুষের মন থেকে আওয়ামী লীগের বিগত ১৪ বছরের সকল পাপ, দুর্নীতি, অন্যায় ও অপকর্মের ক্ষত মুছে ফেলার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ অতি সচেতন। প্রকৃত সত্য তাদের সবই জানা আছে। জনগণকে বেকুব ভাবার কোন সুযোগ নেই।
বাজেট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার আমি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে কিছু কথা বলবো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর সূত্রে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। মোট বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেয়া হবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। যদিও বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। আর নতুন অর্থবছরে (২০২২-২৩) জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সরকার অবশেষে স্বীকার করেছে বহিঃস্থ এবং কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। কিন্তু কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে তার কোন রোড-ম্যাপ দেননি অর্থমন্ত্রী। বাজেটে সাধারণ করদাতারা তেমন কোনো সুখবর পাচ্ছেন না। ধনিক শ্রেণীর কর্পোরেট কর কমানো হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে। তদুপরি ৪ কোটির মত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে করের আওতায় আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট হ'লো ড়ভ ঃযব নঁংরহবংংসবহ, নু ঃযব নঁংরহবংংসবহ ধহফ ভড়ৎ ঃযব নঁংরহবংংসবহ. এটি ব্যবসায়ী বান্ধব বাজেট, জনকল্যাণের কোন কথাই এতে স্থান পায়নি। মূল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদেরকে স্বস্তি দেয়ার কোনো কথা নেই এ বাজেটে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্ত। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলতঃ মধ্যবিত্তরাই। মেডিটেশনের উপরও ৫% কর আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য দ্রব্যমূল্য ও নানা অর্থসংকটে কয়েক বছরে তো মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রায় বিলুপ্তির পথে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামান্য কিছু চাল বিক্রি হতো তার দর বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ টাকায়। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ১৬০ টাকার সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিল ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুইবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল। এ হচ্ছে অবস্থা। এদিকে তেলের মাথায় তেল দেয়া হল পুনর্বার। তৃতীয়বারের মতো কর্পোরেট কর কমছে, অর্থাৎ বৃহৎ ব্যবসায়ীদের সুবিধা বাড়ানো হলো পুনর্বার। ব্যাংক গুলোর অবস্থা একেবারেই শোচনীয় জেনেও খেলাপি ঋণ আদায়ে ছাড় দেয়া হলো। বলা হল প্রতিষ্ঠানগুলো এজন্য কর ছাড়ের সুবিধা পাবে না। হবুচন্দ্র রাজার দেশে এমনটাই হয় । একেই বলে হঠকারী আইওয়াশ। জনগণ বুঝল ঋণখেলাপিদের কর ছাড় দেয়া হচ্ছে না। অথচ ঋণখেলাপিরা যে খেলাপি ঋণের কবলে ফেলে ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এর কুপ্রভাব পড়ছে আর্থিক, সামাজিক ও অন্যান্য সেক্টরে।
আমি বর্তমান সময়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দৈন্যদশার কিছু বাস্তবচিত্র তুলে ধরব। যা বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকারের চরম ব্যর্থতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাদামাটা চিত্র যা গণমাধ্যমের পাতায় শিরোনাম হিসেবে জায়গা পেয়েছে সেটাকেই ভিত্তি হিসেবে ধরে নেব।
যেমন-
১. ’শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’
২. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবঃ সংসার খরচ কমিয়েও কিনতে পারছেন না ছেলের বই
৩. মেস–গ্যারেজে খাবারঃ মাছের টুকরা ছোট হয়েছে, ডাল হয়েছে আরও পাতলা
৪. এক মুরগি ১৮ টুকরা
৫. ৯০ টাকার দুই বেলার খাবার এখন ১৫০
৬. দীর্ঘ হচ্ছে ওএমএস ও টিসিবির লাইন
দ্রব্যমূল্যের যখন চরম এই ঊর্ধ্বগতি, দৈনন্দিন খরচ সামলাতে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক তখন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বললেন, “মানুষ এখন চাইলে ৩ বেলা মাংস খেতে পারে”। অসহায় মানুষের দারিদ্র নিয়ে কি নির্মম উপহাস করছেন তিনি।  দ্রব্যমূল্যের উচ্চচাপে মানুষ যখন দিশেহারা, সরকারপ্রধান নিজেই তখন বিল পরিশোধ না করলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার মত গণবিরোধী হুকুম দিলেন। শ্রমের মজুরি না পেয়ে গার্মেন্টস সেক্টরে যখন শ্রমিক অস্থিরতা, তখন সরকারপ্রধান অনুশাসন দিলেন সাবধান হতে, না হলে আমও যাবে, ছালাও যাবে। এসব কিসের আলামত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ’শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বগুড়ার শিক্ষিত তরুণ মোহাম্মদ আলমগীর কবিরের এই বিজ্ঞাপনটি যেনো বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ ও কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের ক্ষুদা নিবারণের নিঃশর্ত আকুতি। এই যখন অবস্থা তখন জনগণের ভোটের অধিকার হরণকারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এদেশের মানুষের উদেশ্যে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে এই বলে মন্তব্য ছুড়ে দেন “নিজের ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে, সব সরকার করে দিতে পারবে না”: শেখ হাসিনা (সূত্রঃ দি ডেইলি স্টার, ০৭ জুন,২০২২)। একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ¯ে¬াগান অপরদিকে এবারও ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫% করারোপ। এটা তো ংবষভ পড়হঃৎধফরপঃড়ৎু নীতি হলো। অথচ ল্যাপটপ ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছুই তো অচল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৫% কর মানেই হলো শিক্ষা সংকোচন নীতি যা বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক। বেগম জিয়ার সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করে উচ্চ শিক্ষা কে সর্বজনীন করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। আজ যার সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশ। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক বেশি। পড়ালেখার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও কমা শুরু হয়েছিল। অথচ সেখান থেকেও টাকা কামাতে হবে। এবারও শিক্ষা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ মাত্র। ভিশন- ২০৩০ তে বিএনপি বলেছে তা হতে হবে জিডিপির ৫%। এত কিছুর পরও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ০.৮৩% যা জিডিপির ১% এর নীচে, এ ক্ষেত্রেও বিএনপি চেয়েছিল ন্যূনপক্ষে জিডিপির ৫%। এদিকে হতদরিদ্র ও নিঃস্ব জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মাত্র ০.৮৪% বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভিতরে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক বাড়লেও বয়স্ক ভাতা বাড়ানো হয়নি। কৃষিখাত, মাছ চাষ, মুরগী ও গরু পালনে আয় কর আরোপ করা হয়েছে। এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেবে না কৃষি সেক্টরকেও। অথচ মেগা প্রজেক্ট এর ব্যয় ঠিকই বহাল রাখা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু এর সিংহভাগই চলে যাবে পিডিবিতে, ব্যক্তিখাতের অলস কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এবং বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার জন্য। অথচ এই অর্থ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ও দিন আনে দিন খায় এই ধরনের জনগণ ও শ্রম ও কল্যাণ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে পারতো সরকার। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন আগের বছরের মত ৭.৫% বহাল রাখা হয়েছে। দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, সামস্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য হীনতা, ঋণাত্মক ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট একাউন্টস, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ঘাটতি, ডলার মূল্যের অস্থিতিশীলতা ইত্যাদির স্বীকৃতি সত্বেও জিডিপি প্রাক্কলন যেভাবে ৭.৫% অপরিবর্তিত রাখা হলো তা বাস্তব ভিত্তিক নয়। রাজনৈতিক এ বাজেটে প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন ও তাই রাজনৈতিকই, জীবনধর্মী নয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখানো হয়েছে ৫.৬ শতাংশ যা রিংযভঁষ ঃযরহশরহম ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যয় প্রবাহ কিভাবে সংকোচন করা হবে তার কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। বরঞ্চ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রমাণ করে মূল্যস্ফীতি বাস্তবে অনেক বেশি রয়েছে। এদিকে গবেষকরা বলছেন বর্তমানে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ১২%। তাছাড়া তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে কোনভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বলা হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রধান টার্গেট। কিন্তু বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে কি করে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করলে উৎপাদন মূল্য বেড়ে মুনাফা কমবে। তাহলে বিনিয়োগও কমবে। সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের নিকট থেকে অর্থ প্রাপ্যতা কমবে। এই পটভূমিকায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা শুধু আশাই থেকে যাবে। অথবা দিনের শেষে আগের মত পরিসংখ্যানের গোঁজামিল দিয়ে উন্নয়ন প্রহসনের সৃষ্টি করা হবে। যেমন সরকারি পেনশনারদের পেনশন ভাতা বাবদ বরাদ্দ প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। যেহেতু পেনশনের টাকা তাদের অধিকার তাই এই খাতে বরাদ্দকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অন্তর্ভুক্ত করে দেখিয়ে সুরক্ষা খাতের কলেবর বৃদ্ধির ঘোষণা এক ধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। অথচ এগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়। অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়ে বলেছেন। অথচ এটি একান্তই রেগুলেটরি ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বিষয়। অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি এখতিয়ারে হাত দিতে পারেন না। অথচ দুষ্ট চক্রের কবলে বন্দি ব্যাংক খাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো কথা বলেননি। যদিও খেলাপি ঋণের বিষয় এবং ব্যাংকগুলোর দীনতা ইত্যাদি নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দরকার ছিল। মুদ্রাস্ফীতির কথা স্বীকার করলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই। জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মুল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায় নিবেদিত। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এই বাজেটে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়া আড়াাই লক্ষ জনগোষ্ঠী, দিন আনে দিন খায় এই শ্রেণী এবং হতদরিদ্রের জন্য নগদ সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রণোদনার যে সামান্য অর্থ দেয়া হয়েছে তাও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত দুস্থদের কাছে পৌঁছায়নি। টিসিবির ট্রাকে হতদরিদ্রের লম্বা লাইন এবং বার বার একই মোবাইলে প্রণোদনার নগদ টাকা প্রদান এসবই ‘টক অফ দা টাউন’ এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষা খাত ও এসএমইদেরকে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রেও বৈষম্য প্রকট। মালিকপক্ষ কিছু অর্থ পেলেও দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণী কিছুই পায়নি বলা চলে। অথচ শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা চলমান রেখেছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বিএনপি কয়েকবার আনুষ্ঠানিকভাবে দিন আনে দিন খায় এই ধরনের দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণীর হাতে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা সহ নানাবিধ প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের নিজস্ব স্টাইলেই চলছে। চুরি আর দুর্নীতি ছাড়া এরা কিছুই বোঝে না। বলা হচ্ছে দুই বছরে করোনার প্রেক্ষিতে লক্ষ হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল; আমাদের প্রশ্ন সে টাকা গেল কই ? তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা  হয়েছে ? জনগণ জানতে চায়। শুনি, রফতানি না কি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন ? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে এবং এ পর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।
এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এ বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ 'বাস্তবতা বর্জিত' একটি বাজেট, এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পূর্বেই বলেছি যেহেতু এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় সুতরাং জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য বাজেট পেশ করার এখতিয়ারও তাদের নেই। এ সরকার পরিকল্পীত ভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে, জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্ছিত হয়েছে। একটি অনির্বাচিত সরকার কখনই জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকঙ্খা পুরনের জন্য এই মূহুর্তে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আমরা মনেকরি সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি সংগঠনের তথা জনগণের ঐক্যের মধ্যদিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসীবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্থান্তর করে এবং সংসদ বাতিল করে নতুন করে গঠিত নির্বচন কমিশনের পরিচালনায় সকল দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনই এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় সকল দল, মত ও পথের মানুষকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কঠোর গণআন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনে যুগোপযোগী, কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় “অর্থনৈতিক সংস্কার” করে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইন-শা-আল্লাহ্।  

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom