জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি বাতিলের দাবি ক্যাব’র
বিপিসি ৪৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছে

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩-এর ৪২ ধারামতে সব পক্ষের শুনানির ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ না করা বিইআরসির আইনের লঙ্ঘন, যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি অর্থদণ্ড কিংবা কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। এ মূল্যবৃদ্ধি বাতিলের দাবি জানিয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, গত ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত লুণ্ঠনমূলক মূল্যহার বহাল রেখে বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৮ কোটি টাকা ভোক্তাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার দেয়া এক বিবৃতিতে ক্যাব বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রস্তাবমতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যহার আকস্মিকভাবে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি করে।
বিইআরসি আইনের ৩৪(৪) উপধারা মতে পেট্রোলিয়াম পণ্যসহ সকল জ্বালানির মূল্য পক্ষগণের শুনানির ভিত্তিতে নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। বিপিসি বিইআরসি’র লাইসেন্সি। এ লাইসেন্সি হিসেবে উক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিপিসিকে উক্ত আইনের ৩৪(৬) ধারা মতে বিইআরসির নিকট পেশ করতে হবে। কিন্তু বিপিসি বিইআরসির পরিবর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পেশ করে এবং জ্বালানি বিভাগ মূল্যবৃদ্ধি করে। এতে প্রতীয়মান হয়, বিপিসি উক্ত আইনের ৩৪(৬) উপধারা লঙ্ঘন করে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ওই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে পেশ করে। জ্বালানি বিভাগ ৩৪(৪) উপধারা লঙ্ঘন করে সে প্রস্তাবমতে মূল্যবৃদ্ধি করে। সুতরাং বিইআরসি আইন লঙ্ঘনের অপরাধে বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং উক্ত মূল্যবৃদ্ধির আদেশ পূণর্বিবেচনা করা জরুরি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার আইনের ৪৭ ধারা মতে বিইআরসি’র।
উক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে প্রেরণ এবং জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক সে মূল্যবৃদ্ধি করা বিইআরসি আইনের পরিপন্থী। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হলে এলপিজির মতো ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানো হতো। কিন্তু বাস্তবে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগ বিষয়টি উপস্থাপনে বিরত থেকে স্বীয় বিবেচনায় মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন এবং ভোক্তাদের কাছে সরকার এখন অপ্রিয়। এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
ক্যাব বলছে, বিইআরসি আইনের ৩৪(৩) উপ-ধারা মতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত মূল্যহারসমূহ বিইআরসি নির্ধারণ করবে। সে মূল্যহার জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় তথা লাইসেন্সির রাজস্ব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সূত্রোক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল/প্রত্যাহার/স্থগিত করে মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবটি বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারা মতে বিইআরসি কর্তৃক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিইআরসিতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় উক্ত প্রজ্ঞাপন মতে ডিজেল ও কেরোসিনের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইনী বিধানমতে মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে মূল্যবৃদ্ধির আদেশ পুনর্বিবেচনা করার বিধান রয়েছে। উক্ত মূল্যবৃদ্ধি এবং তা পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার বিইআরসির।
বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ভোক্তাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করেছে। জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভর্তুকি প্রদানের লক্ষ্যে এ অর্থ দিয়ে এনার্জি প্রাইজ স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমনভাবে ভোক্তাদের টাকায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: