জ্বালানি তেল এবং পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি সরকারের ‘সাজানো খেলা: মির্জা ফখরুল
এই সরকার পকেট কাটা সরকার। যাদেরকে লোকে সবাই বলে পকেট মার। দিনে রাতে পকেট কাটছে।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জ্বালানি তেল এবং পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি সরকারের ‘সাজানো খেলা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে এক মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়। ঢাকার দুই মহানগরের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী এতে অংশ নিয়ে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার পকেট কাটা সরকার। যাদেরকে লোকে সবাই বলে পকেট মার। দিনে রাতে পকেট কাটছে। এই পকেট মার সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে পকেট কাটছে। এখন পকেট কাটছে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়ে। দ্বিতীয়বার জনগনের পকেট কাটলো বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে। এসব তাদের পাতানো খেলা, সাজানো খেলা।”
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সারপ্লাস ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। বিগত সময়ে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গিয়েছিলো তখন এই পেট্রোলিয়াম করপোরেশন তারা দাম কমায় নাই। উচ্চ দামেই তারা জনগণের পকেট থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে যথন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে ওই সংস্থার লোকেরা বলছে যে, আরো কমপক্ষে ৬ মাস তারা দাম না বাড়িয়েই চলতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করে নাই। কেনো? এই সরকারের চরিত্রই হচ্ছে লুটপাট। তারা একদিকে অর্থনীতিকে লুট করছে, জনগণের পকেট কাটছে আর নিজেদের পকেট ভারী করছে। আপনারা দেখেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা তারা পাঁচার করেছে।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী যারা দায়িত্বে আছেন এই সড়ক পরিবহনের অথবা জ্বালানির দায়িত্বে যারা আছেন তারা একবারও জনগনের কল্যাণের কথা চিন্তা করে নাই। যার ফলে এই অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কী হয়েছে? জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহনের ভাড়া বাড়বে এবং ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। ট্রাকের ভাড়াও বাড়বে। একই সঙ্গে আমাদের চাল-ডাল-তেল-লবন-সবজী যেগুলো বাইরের থেকে আসে তারও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।”
‘মানুষ গরীব থেকে আরো গরীব হচ্ছে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মানুষের তো আপনার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন যে, কিছুদিন আগেও করোনা শুরুর আগে এদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিলো ২ কোটি। এখন হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ। প্রতিদিন মানুষের গরিবী বাড়ছে, দারিদ্র বাড়ছে। এদিকে তাদের(সরকার) কোনো খেয়াল নাই। তারা যখন ২০০৮ সালে নির্বাচন করে তখন জনগণকে কথা দিয়েছিলো যে, ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবে। এখন চালের দাম ৬০ টাকা/৭০ টাকা। সব কিছু দাম বেড়ে গেছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে উন্নয়ন দিচ্ছে। এমন উন্নয়ন দিচ্ছে আমরা নাকী দেখতে পাই না। সেই উন্নয়ন শুধু দেখেই যাবে, পিলার দেখছি, উড়াল সেতু দেখছি। আমাদের সাধারণ মানুষের কী হচ্ছে। তারা গরীব থেকে গরীব হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে ঘরে ঘরে দেখবেন …। প্রতিদিন পত্রিকায় থবর আসে যে, শিশুসহ মা-বাবার আত্মহত্যা অথবা সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা। এগুলো দারিদ্র্যের কারণে আত্মহত্যাগুলো হচ্ছে যখন তারা সন্তানদের মুখে খাওয়ার দিতে পারে না, দুধ দিতে পারে না তখন তাদের এভাবে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিচার ব্যবস্থা কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, প্রশাসন কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে দেখেন। আজকেও খবরের কাগজে খবর আছে যে, আপীল শেষ না হয়, এখন পর্যন্ত একজনের আপীল বিভাগে শেষ হয়নি, রিভিউ পিটিশন দেখা হয়নি, রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্টে। তার আগেই মৃত্যুদন্ড কার্য্কর করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। কয়দিন আগে দুইজনের মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিয়েছে আপীল বিভাগের রায় আসার আগেই। অর্থাত কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নাই, কোথাও নিয়ম শৃঙ্খলা নাই। সম্পূর্ণ নৈরাজ্যকর একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে এই সরকার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কল্পিতভাবে সচেতনভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্ত অর্জনগুলো ধবংস করে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যে কথা দিয়েছিলেন তখনকার নেতৃবৃন্দ যে এদেশে একটা মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, মানুষের বাক স্বাধীনতা থাকবে, ভোটের অধিকার থাকবে। এথন তো মানুষ ভোটই দিতে পারে না। ভোট কেন্দ্রে জনগন ভোট দিতে যায় না, তারাই ভোট দিয়ে শেষ করে, তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে ভোট কেন্দ্রে। গত এক বছরে ৮৭ জন মারা গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব,সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ দুই মহানগরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: