গোয়েন্দা অভিযানে ৫ ডাকাত গ্রেফতার

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ০৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান এর নির্দেশনায় এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।
গ্রেফতারকৃতরা ডাকাত সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ আলী সোহাগ, মো. মোহসিন আলী, মো. নূরুন্নবী ওরফে জনি, মো. আমির হামজা আকাশ ও মো. কাজল। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি হলুদ রংয়ের পিকআপ (রেজিঃ নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ন-২০-৪৭৩৭), ১ টি লোহার শাবল, ১টি লোহার তৈরী কাটার, ১টি কাঠের হাতলযুক্ত কাস্তে, ১টি ছোট চাকু, ১টি হেক্সো ব্লেড, ১টি ৩২মিমি রেঞ্জ, ১টি স্ক্রু ড্রাইভার, ১টি ত্রিপল, ২টি সুইচ গিয়ার ও ৬টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পিকআপে করে ডাকাতি করা ২টি গরু নিয়ে তারা রামপুরা ব্রিজ হয়ে বনশ্রী এলাকার ভিতর দিয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ডাকাতরা ঈদের আগের দিন গরু দুটি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া গরুর হাটে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং বিক্রয়কৃত টাকা ডাকাত দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা ঢাকা মহানগর, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ মহাসড়কে মালবাহী ট্রাক ও পিকআপে ডাকাতি করে থাকে। রাত্রিকালে রাস্তায় চাল, তেল, মুরগি, মাছ, ডাল, ডিম, ডিজেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির ট্রাক/ পিকআপ ডাকাতি করে এবং ডাকাতির মালামাল ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে থাকে।
এছাড়া ডাকাত দলের সদস্যরা ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ,টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় দিনের বেলায় রেকি করে। রাত্রে যে গোয়াল ঘরে তালা বা শিকল লাগানো থাকে তা তারা লোহার কাটার দিয়ে কেটে প্রবেশ করে গবাদি পশু নিয়ে অপেক্ষমান ট্রাকে তুলে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নিয়ে চলে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা টিনের ঘেরাও করা বাড়ি বা গোয়াল ঘরের মাটি খুঁড়িয়ে গর্ত করে প্রথমে একজন ভিতরে প্রবেশ করে। বাড়ি বা গোয়াল ঘরের ভিতরে প্রবেশ করার পর দরজা খুলে দিলে তখন অন্যান্য সদস্যরা ভিতরে প্রবেশ করে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান সরদার বলেন, গত কোরবানির ঈদের এক দিন আগে (১৯ জুলাই, ২০২১) একজন গরু ব্যবসায়ী পিকআপযোগে গরুসহ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় মগবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। আনুমানিক ভোর সারে তিনটা হতে চারটার মধ্যে বনানী থানার নিউ এয়ারপোর্ট রোডের চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন মহাখালী ফ্লাইওভারের পাশে পৌঁছলে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা অন্য একটি পিকআপ দিয়ে ভিকটিমের পিকআপটিকে চাপ দেয়। ধারালো চাকু দিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা হুমকি-ধামকি ও ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে পিকআপ থেকে নামিয়ে তাদের পিকআপে উঠিয়ে নেয়। কিছু দূর গিয়ে অজ্ঞাতনামা এক স্থানে নামিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, এরপরে গরুসহ গাড়িটি ডাকাত দলের সদস্যরা নিয়ে চলে যায়। এই সংক্রান্তে বনানী থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পর এর ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান সরদার আরো বলেন, প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলের সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর গত ৯ নভেম্বর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ও গাজীপুর জেলায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের বনানী থানায় রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: