Ad0111

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার র‌্যালী: মির্জা ফখরুল

রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র  ফিরিয়ে আনার র‌্যালী: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার র‌্যালী বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

আজ রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিজয় র‌্যালী শুরু করার আগে সংক্ষিপ্ত  বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। এই  র‌্যালীতে অংশ নেয়া বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের প্রতিটি ব্যানারে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যালীতে অংশ নেয়া নেতা কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন। দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে সামনে এসে শেষ হয়। 

বিএনপির শোভাযাত্রার ব্যানারে লেখা ছিলো, প্রতিহিংসার বিচারে বন্দি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জনগণের আস্থার প্রতীক গণতন্ত্রের মা 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি চাই'।এর পাশে লেখা ছিলো, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র‌্যালী।  

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সন্তানের জন্য বাসযোগ্য দেশ গঠন করতে চেয়েছিলাম। যেখানে কোন অন্যায় নির্যাতন থাকবে না। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শাসক গোষ্ঠি ক্ষমতা দখল করে আছে। যেখানে মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। 

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৯ বছর সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই ঘনতন্ত্র এখন আবার হারিয়ে গেছে। মানুষের কথা বলার অধিকার নাই। ভোটের অধিকার কেরে নিয়েছে। তাই আমরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। তাই আজকের র‌্যালী বাংলারেদশকে নতুন করে জেগে ওঠার র‌্যালী, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার র‌্যালী। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের এই র‌্যালী বাংলাদেশের জনগণের নতুন করে জেগে উঠবার র্যালি। আজকের এই র্যালি বাংলাদেশের মানুষের নতুন করে সংগ্রাম শুরু করবার র‌্যালী। আজকের এই র‌্যালী বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার র‌্যালী। তাই আসুন, আজকে এই র‌্যালীর মধ্যে দিয়ে আমরা সেই শুভ সূচনা করি। 

'যে সূচনার মধ্যে দিয়ে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবো এবং তাকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবো। একই সাথে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি ১৯৭১ সালে একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকে নির্বাসিত অবস্থা থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা এখানে আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারবো। 

নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে পারবো, আসুন সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের র্যালির শুভ সূচনা করি।  

মির্জা ফখরুল ববলেন, আজকে আমরা     এবিজ য়র‌্যালীতে  অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অংশ নিচ্ছি। ৫০ বছর পরে যখন আমাদের সবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে, সেই সময়ে যখন আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি আজকে এই সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায়, অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে- সেই সময়ে আমরা এই বিজয় র্যালি অনুষ্ঠিত করছি। 

তিনি বলেন, আজকের এই র্যালি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, ৫০ বছর আগে একাত্তর সালে যখন আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করি, যার যুদ্ধরা অনেকেই আজকে এখানে উপস্থিত আছেন। আমরা সেই যুদ্ধ করেছিলাম একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, সেই যুদ্ধ করেছিলাম- আমরা মুক্ত একটি স্বদেশ পাবো বলে, সেই যুদ্ধ করেছিলাম- আমাদের বাক-স্বাধীনতা থাকবে, আমাদের লেখার স্বাধীনতা থাকবে, সংগঠন করার স্বাধীনতা থাকবে এবং আমাদের সন্তানদের জন্য একটা বাসভূমি গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। যেখানে কোন রকমের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও দমননীতি থাকবে না। 

'কিন্তু আজকে আমাদের কি দুর্ভাগ্য, আমরা কি অসহায় হয়ে পড়েছি- আজকে এই ৫০ বছর পরে আমরা দেখছি, এমন একটি সরকার যারা জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আজকে একাত্তরের সমস্ত চিন্তা-ভাবনাগুলোকে, আশা-আকাঙ্খাগুলোকে এবং চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য গোটা জাতির ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ণের স্টিম রোলার আজকে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একে একে আমাদের অর্জিত সমস্ত অধিকারগুলো ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আমাদের ভোটের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের লেখা ও বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।'

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা আজকে সবার আগে স্মরণ করতে চাই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন এবং সংসদে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন- তাকে আজকে এরা (আওয়ামী লীগ) ধ্বংস করে দিয়েছে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই বিজয় শোভাযাত্রা শুরু  হয়।  সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যানার-ফেস্টুন রংবে রঙের পোশাক পড়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। 

নেতাকর্মীদের চাপে নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের দুই পাশের রাস্তা বন্ধ রয়েছে। নেতা-কর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। 

বিএনপির শোভাযাত্রায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালাম,  যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আমিরুল ইসলাম আলিমসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
  এদিকে র্যালিকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মী শোভাযাত্রাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন তারা।

অন্যদিকে বিএনপির র্যালিকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় দলটির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশেপাশের এলাকায়। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করা হয়। এই মঞ্চেই ব্যানার টানানো হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, র্যালি ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়।।এছাড়া নয়াপল্টনে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে।


দুপুর ১২টায় কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরা থেকে ফকিরেরপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের অবস্থানের ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। 

এর আগে, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

শোভাযাত্রায় ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news