রাজস্ব নিরূপণ-আদায় নিরীক্ষা সিএজিকে না দেওয়া দুর্নীতি সহায়ক- টিআইবি

রাজস্ব নিরূপণ-আদায় নিরীক্ষা সিএজিকে না দেওয়া দুর্নীতি সহায়ক- টিআইবি

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ না রাখা করফাঁকি ও দুর্নীতির সহায়ক বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় টিআইবি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আপত্তি ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ‘সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এ এমন কিছু বিধান রাখা হয়েছে, যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব নিরীক্ষককে (সিএজি) সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে তার কার্যসম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ‘সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।

টিআইবি বিবৃতিতে জানায়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ না রাখা; যে কোনো আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান এবং বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিধান রাখা হয়েছে। যা স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবদুষ্ট ও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি।

বিবৃতিতে অধ্যাদেশে এ ধরনের মৌলিক দুর্বলতা বহাল রাখা সিএজি’র সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা ও প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতে অনীহার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধ্যাদেশের ৭ ধারায় রাজস্ব ‘নিরূপণ’ ও ‘আদায়’ নিরীক্ষার সুযোগ না রাখার ফলে সম্পূর্ণরূপে সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় সংক্রান্ত বিষয় জবাবদিহির বাইরে থেকে যাবে। রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে করফাঁকির অন্যতম মাধ্যম, তা অন্তর্বর্তী সরকার কেন উপেক্ষা করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ড ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা সরকার প্রভাবিত হচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন মোটেই অমূলক হবে না। অথচ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে মহা হিসাব নিরীক্ষকের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ১৭ ধারায়, সিএজিকে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি এবং ১৮ ধারায় বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার শামিল। কেননা রাষ্ট্রের অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সরকারি কর্ম কমিশনের আইনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু, এ জাতীয় বিধানাবলি বহাল রেখে অধ্যাদেশটি কার্যকর ঘোষণা করা হলে সরকারের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সিএজির জন্য নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ভূমিকা পালন সম্ভব হবে না।

বিবৃতিতে টিআইবি আরও জানায়, ‘পাবলিক অডিট বিল-২০২৪’ এর খসড়া নিয়ে গোপনীয়তার চর্চায় টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করে। পরে সংগৃহীত ‘খসড়া পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ওপর টিআইবি উল্লিখিত ধারাসমূহসহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ অর্থ উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার নিকট প্রেরণ করে। উপদেষ্টারা বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা এতটা অসংবেদনশীলতার পরিচয় দেবেন না বলে টিআইবি এখনো আশা করছে মর্মে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।