ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে : মির্জা ফখরুল

আজ সোমবার (৩০ মে) শেরে-বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে : মির্জা ফখরুল
জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার দেশে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে  তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছুদিন ধরে যেটা আমরা লক্ষ্য করছি যেই তাদের নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে তারা আবার সেই পুরনো কায়দায় ঠিক একইভাবে ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমাদের ছাত্র দলের ওপর হামলা, আমাদের বিভিন্ন জেলাগুলোতে হামলা, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা আজকে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে তারা। আমরা এখানে শপথ নিয়েছি কোনো ভয়-ভীতি আমাদেরকে দমন করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষকে কোনো দিন দমন করতে পারেনি। আমরা সবকিছুকে মোকাবিলা করে এদেশের জনগনকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা অবশ্যই এই ভয়াবহ যে ফ্যাসিস্ট সরকার যারা আজকে পাথরের মতো চেপে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগনের পার্লামেন্ট এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এ্ই দিনকে ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ১১টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু সহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন। নেতা-কর্মীরা সকলে কালো ব্যাজ ধারণ করে।

দিবসের শুরুতে ভোরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দলের প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালের পরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র, একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে নতুন করে একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন এবং জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত সফল নেতৃত্বে ‘বোটমলেস বাসকেট’ বাংলাদেশকে বলা হয়েছিলো সেই বোটমলেস বাসকেট থেকে সত্যিকার অর্থেই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে করবার যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, যে ভিত্তি তিনি রচনা করেছিলেন সেই নেতার প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে গণতন্ত্রকে জিয়া্‌উর রহমান পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সেই হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াই করেছিলেন, তিনি এখনো এই  গণতন্ত্রের জন্য গৃহে অন্তরীন হয়ে আছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তিনি নির্বাসিত হয়ে আছেন, আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে সেই বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত। বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজকে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের মধ্য দিয়ে দেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সমস্ত কথা বলে, দুরাত্মার প্রতি সারের অভাব হবে। আজকে এসব কথা বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, মূল বিষয়টা হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই দেশের মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, ইতিমধ্যে রাজপথে রক্ত ঝরেছে । ইনশাল্লাহ এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরে পাবে ।

এ সময়ে বিএনপির যুগবম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন,  যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোয়ায়েম মুন্না, সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন হাসান, যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  হেলেন জেরিন খান,মহিলা দল নেত্রী নায়াব ইউসুফ, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আবদুর রহিম, উলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ডা. সরকার শামীম, প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম, ডা. মাসুদ আক্তার জিতু, এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, জিয়া পরিষদের ডা. অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ড. এমতাজ হোসেন, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন রোকন, ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির আবদুল করিম আব্বাসী, শাহাদাত হোসেন সেলিম, তমিজ উদ্দিন টিটু, এম এ বাশার, চাষী এনামুল হক, একেএম মহিউদ্দিন, এসএম বেলাল প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পুস্পস্তবক অর্পনের পর রাজধানীর দক্ষিন ও উত্তরের মোট ৭০ টি স্পটে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার সামগ্রি ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন(ড্যাব) উদ্যোগে দিনব্যাপী বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ বিতরনের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

শহীদ রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়ার ছবি পোষ্টার প্রকাশ করেছে ও কয়েকটি দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom