তথ্য প্রযুক্তি এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা : তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বার্তা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: আসুন আমরা একটু আলোচনা করি বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অর্থপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তির বিষয় নিয়ে। তথ্য প্রযুক্তি জিনিসটি আসলে কি এবং এর থেকে কিভাবে আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাব। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কম-বেশি তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এবং প্রয়োগ ঘটেছে। সাধারণত বলা যায় যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রয়োগের তুলনায় উন্নত বিশ্বে এর প্রয়োগ লক্ষণীয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে সর্বত্র কিছু মাত্রায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং বিকাশ সাধন হয়েছে কিন্তু তাদের ব্যবহারযোগ্যতা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আইসিটি অ্যাপলিকেশনগুলোর প্রধান অন্তরায় হলো যে, এগুলো নিজে থেকে পরিবর্তনের ক্ষমতাহীন, গতিহীন, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব এবং যার ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অচল।
তথ্য প্রযুক্তি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যে, এটি একটি উপায় যেটা কিনা তথ্যের অ্যাক্সেস, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং আদান-প্রদানে সাহায্য করে থাকে। এই উপায়টি বিভিন্ন প্রযুক্তির সংমিশ্রণের মাধ্যমে সম্পাদন হয়। তথ্য প্রযুক্তির দরকারি অংশগুলো হলো কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস এবং সফ্টওয়্যারের মতো সরঞ্জাম যা সংযোগ, যোগাযোগ এবং ডিজিটাল মিথস্ক্রিয়াকে সহজতর করে দেয়। আমাদের এই যুগে, তথ্য প্রযুক্তি গণমানুষের এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভাবন, সংযোগ এবং প্রবৃদ্ধির পিছনে একটি চালিকাশক্তি। এটি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করার জন্য, তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নতির জন্য একটি অতুলনীয় সরঞ্জাম। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে এমন কোনও ব্যবস্থা নাই সেটা পর্যন্ত যেমন স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য প্রযুক্তি আমাদের সমাজে এবং ব্যক্তি জীবনের উন্নতি ঘটাতে স্পর্শ করে নাই।
যখন এইসব তথ্য প্রযুক্তি সিস্টেমগুলো তৈরি করা হয় তখন প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো কাগজ-কলমের ব্যবহার থেকে বের হয়ে এসে কাজগুলোকে কম্পিউটার-এর মাধ্যমে করা। যে-কেউ এটাকে প্লেইন অটোমেশন বলে থাকতে পারে, যেটা কিনা তথ্য প্রযুক্তির একটি মৌলিক প্রয়োগ। একটা সময় ছিলো যখন আমরা কাগজহীন দপ্তর অথবা পেপারলেস অফিস পরিচালনার কথা বলতাম, যেখানে কোনও কাগজের ব্যবহার থাকবে না, কাগজ অপচয়ের চিন্তা থাকবে না, এটা সম্পূর্ণ অ্যানালগ সিস্টেমকে ডিজিটালে রূপান্তর করবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা এর কথাগুলোর উপরেই স্থাপন করা হয়েছে, এ কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়। এই ধরনের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে বলা হয় ট্র্যাডিশনাল আইটি সিস্টেম।
এখন আপনি জানতে চাইতে পারেন ট্র্যাডিশনাল আইটি বলতে আমি কি বোঝাচ্ছি বা এখানে কি কি সুযোগ-সুবিধা থাকতে পারে? এটি মূলত একটি তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো যেখানে কম্পিউটিং ডিভাইসগুলো একটি দূরবর্তী সার্ভার-এর সাথে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বা ইন্টারনেটের কানেকশন দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযোগের মাধ্যমে সকল ডাটার সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে পরিমার্জন করা সম্ভব। এখানে যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো শুধুমাত্র কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোতে প্রদানকৃত ডাটাগুলোকে একটি সুবিন্যস্ত এবং প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে এবং প্রয়োজন মতো সরবরাহ করে রিপোর্ট প্রদান করে। এখানে আমরা কোনও ইনোভেশন নিয়ে আশা বা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারি না। তার অর্থ হচ্ছে এ পদ্ধতিটাই কোনও ধরনের ইনোভেশনকে সাপোর্ট করে না। এখানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কোনও ব্যবহার নেই। তাই এই ধরনের ট্র্যাডিশনাল আইটি সিস্টেমগুলো কিন্তু বুদ্ধিমান হয় না। এই সফটওয়্যার গুলোর সাথে যখন আমরা যোগাযোগ করি তখন আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুক্ষীণ হয়ে থাকি।
বর্তমান পৃথিবী তথ্য ও প্রযুক্তির জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক সামনে এগিয়ে গিয়েছে। প্রতিটি আইটি সিস্টেমস কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত হওয়া এখন একটি সময়ের দাবি। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলতে এমন একটি কম্পিউটার সিস্টেমের বিকাশকে বোঝায় যা সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম, যেমন যুক্তি, শিক্ষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উপলব্ধি করা। এই কাজগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে করা। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের টেকনিক ব্যবহার করে, তার মধ্যে মেশিন লার্নিং (Machine Learning), ডিপ লার্নিং (Deep Learning) এবং প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (Natural Language Processing) অন্যতম। এখন দেখে নেই এগুলো কিভাবে কাজ করে।
মেশিন লার্নিং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার একটি উপসেট যার মধ্যে রয়েছে ডেটার উপর অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা যাতে এটা স্পষ্টভাবে প্রোগ্রাম না করেই ভবিষ্যদ্বাণী বা সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এই টেকনিক এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধানে থাকা শিক্ষা (Supervised Learning), তত্ত্বাবধানহীন শিক্ষা (Unsupervised Learning) এবং শক্তিবৃদ্ধি শিক্ষা (Reinforcement Learning)। ডিপ লার্নিং এক ধরনের মেশিন লার্নিং যা ডেটার বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করার জন্য অনেক স্তর (“গভীর”)সহ নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। এই টেকনিক অডিও, টেক্সট, চিত্র এবং বক্তৃতা বিশ্লেষণের মতো কাজে বিশেষভাবে কার্যকর। প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (Natural Language Processing) এমন একটি টেকনিক যা কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভাষা অধ্যয়নকে একত্রিত করে। এটি কম্পিউটারগুলিকে এমনভাবে মানব ভাষা বুঝতে, প্রক্রিয়া করতে এবং তৈরি করতে সাহায্য করে যা অর্থবহ এবং কার্যকরভাবে মানুষকে বুঝতে সক্ষম। সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ক্রমবর্ধমান পরিমাণে টেক্সট ডেটার সাথে, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ অন্তর্দৃষ্টি অর্জন এবং টেক্সট বিশ্লেষণ বা ভাষা অনুবাদের মতো কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করার জন্য একটি মূল হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
আজকের এই যুগে আমরা খুব স্মার্ট উপায়ে, সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে চাই যেন আমাদের সময় বেঁচে যায় এবং কাজের মানও ভালো হয়। এখন আমাদের কাজের পরিমাণ অনেক বেশি, এবং এই সমাজে অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। সবার জীবনে কাজের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে যে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবাই দিন-রাত প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে আছি। দৈনন্দিন কাজগুলোকে অল্প সময়ে করার জন্য, এই কাজগুলোকে আরও ইন্টেলিজেন্টভাবে করার জন্য আমাদের অনেক স্মার্ট সিস্টেম দরকার, স্মার্ট সফটওয়্যার দরকার। এখন প্রশ্ন আসতে পারে স্মার্ট সিস্টেম আসলে কি? স্মার্ট সফটওয়্যারই বা কি? স্মার্ট সিস্টেম বা সফটওয়্যার দ্বারা আমরা এমন একটা সফটওয়্যার অথবা সিস্টেম-এর ধারণা চিন্তা করতে পারি যাকে কিনা আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে পারব, আমরা সেটাকে বুঝাতে পারি যে কোন কোন কাজগুলো আমরা রিপিটেটিভেলি বা বার বার করি। এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি সফটওয়্যারগুলো প্রয়োজন মতো তৈরি করে নিতে পারি তাহলে ওই সিস্টেমগুলো আমাদের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে নিজেরাই সমাধান করে দিবে, যার ফলে আমাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এটাই হচ্ছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার একটি বিশেষ প্রয়োগ। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্ততা আসলে এমন যে মানুষের ব্যবহার তাঁকে অটোমেট করে সফটওয়্যার-এর ব্যবহারে রূপান্তরিত করে ফেলে যার ফলে সফটওয়্যারগুলো আরও ভালোভাবে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে।
যখন তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক সমাজের ভিত্তিপ্রস্তর গঠন করে ফেলেছে, তখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর দক্ষতা এবং সংযোগ অর্জনের ক্ষমতায়ন করে। এখানে আমরা বলতে পারি যে এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বিভিন্ন শিল্পে বিস্তৃত, যা কর্ম, শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবনের ভবিষ্যৎকে রূপ দেয়, তা এখন অনস্বীকার্য। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে, এর সম্ভাবনাকে গ্রহণ করে এর চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদ্ভাবনী ভবিষ্যৎ উন্মোচনের মূল চাবিকাঠি। সারা পৃথিবী এই ক্ষেত্রে শিক্ষায় এবং গবেষণায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত কোনও কার্যকর তথ্য প্রযুক্তি সিস্টেম ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং ব্যবহার শুরু হয়নি। এতে করে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পরিবহণ সেবা, শিক্ষা, আইন, বিচার, কৃষি, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, জনপ্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেবা, সেবার মান, সেবার চাহিদা প্রয়োজন মতো পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেবাগুলোর মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না, মানুষের কল্যাণে জনপ্রশাসন যেভাবে কাজ করছে তা সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, মানুষের হাতে হাতে আন্তর্জাতিকভাবে তৈরিকৃত বিভিন্ন এপ্লিকেশন সফটওয়্যার, যার অধিকাংশ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত। মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এপ্লিকেশন ব্যবহার করছে কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ তার কোনও সিস্টেম এ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে না এটি হতে পারে কি?
এখন আরও প্রশ্নের বিষয় হলো, বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের কি করতে হবে? এটা যদি আমরা করতে চাই তাহলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সিস্টেম বা আইসিটি কি জিনিস তাদেরকে শেখাতে হবে। এটা যদি না বলতে পারি বা শিখাতে পারি তাহলে মানুষ জানবে না কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কি জিনিস, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে, মানুষ এটাকে শুধু কথার কথা হিসেবে ধরে রাখবে। তো আজকের এই আলোচনা বা লেখায় আমি কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করব এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে এই আলোচনাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরব যেন মানুষ বুঝতে পারে, কেন আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সিস্টেম ব্যবহার করব এবং কেন আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত জ্ঞান ধারণ করব। যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটা অত্যন্ত ভালো কিছু হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে আমরা আমাদের মোবাইল-এ মিটিং সিডিউল করতে চাই তাহলে মিটিং সিডিউল করার জন্য আমরা সাধারণত আমদের বড় বড় পদে যারা থাকেন, বা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন তার একজন এপিএস রাখেন বা যিনি তার টাইম টেবিল দেখেন, কোথায় যেতে হবে, কি করতে হবে না হবে তার খবর রাখেন এবং সময় মতো তার বসকে জানিয়ে দেন। কিন্তু এই কাজগুলো যদি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত একটা এপ্লিকেশন বা ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট করতে পারে তাহলে ক্ষতি কোথায়? আমরা যে ডিকটেশন দেব সেটা কথার মাধ্যমে বলতে পারি, বাংলা ভাষায় দিতে পারি, লিখে দিতে পারি, যেমন “আপেল সিরি” সেট গ্রহণ করতে পারবে। সিডিউল এ যদি কোনো প্রকার অসুবিধা থাকে যেমন টাইম টেবিল পরিবর্তন থাকে, খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে মিটিং সিডিউল থাকে, একটা মিটিং-এর মধ্যে আরেকটা মিটিং-এর সময় চলে আসে, তখন এই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট “সিরি” সুন্দরভাবে সেগুলো সমাধান করতে পারে, এলার্ট দিতে পারে এবং রেকর্ড রাখতে পারে। এটার জন্য তো আমাদের কাউকে নিয়োগ করতে হচ্ছে না।
চিন্তা করে দেখুন সারা বাংলাদেশের সকল সরকারি কর্মকর্তার টাইম সিডিউল একটা সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, এবং সিস্টেমটা এতটাই শক্তিশালী যে কারও সাথে কারও সময়ের জাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই মতো পর্যবেক্ষণ করছে। বিষয়টি চিন্তা করলে অনেকটা সকল কর্মকর্তার জন্য একমাত্র একজন এপিএস নিয়োগের মতো মনে হবে। আপনি যদি হিসাব করেন তাহলে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের এপিএস-এর মোট হিসাব মিলিয়ে শেষ করতে পারবেন না। আর তাদের বেতন-ভাতা হিসেবে সরকারি কোষাগারের কি পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, যা মূলত জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্স-এর টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব। এখানে আরেকটি প্রশ্ন করতে পারেন, যদি একটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সিস্টেম দিয়ে দেশের সকল সরকারি এপিএসের কাজ করে দেয়া যায় তাহলে এই বিপুলসংখ্যক জনগণের আয়ের কি ব্যবস্থা হবে? তারা তো তাদের চাকুরি হারাল, এতগুলো পরিবার এর আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেল। আসলে না, সেট হলো না। এই পরিমাণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠি তাদের মেধা আরও ভালো কোথাও কাজে লাগানোর সুযোগ পেল। তারা তাদের জ্ঞান, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নিজেরা কিছু করতে পারবে, উৎপাদন করতে পারবে, মানুষের কর্মসংশোধনের ব্যবস্থা করতে পারবে, এবং সরকারি সহযোগিতা পাবে, সেটা প্রশিক্ষণমূলক হোক অথবা অর্থনৈতিক হোক।
আমরা যখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত সিস্টেম-এর মাধ্যমে কর্মঘণ্টা বাঁচাচ্ছি, সেটা কখনই ফেলনা না। আমরা এই কর্মঘণ্টাগুলো ব্যবহার করতে পারব আরও উন্নতির জন্য। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো একটা সময় অনেক বড় উন্নয়ন সাধন করতে পারে।
এরকম আরও একটা উদাহরণ দেয়া সম্ভব। যেমন সরকার চিন্তা করছে বাংলাদেশের কোনও একটা জায়গায় একটা বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা প্রয়োজন। এখন যদি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেম থাকে, যেটি সাধারণ জনগণের বিভিন্ন কমেন্ট, মতামতগুলোকে পর্যালোচনা করে তার প্রভাবগুলোকে পরিমাপ করবে। অনেক পরিমাণ পাবলিক ডাটাকে বিশ্লেষণ করে সুন্দরভাবে প্রভাবগুলোকে পরিমাপ করতে পারবে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চাহিদার পরিপূরক ধারণা দিতে পারবে। এই পরিমাপের উপর ভিত্তি করে, হাসপাতালটা কোন অঞ্চলে, কোথায় স্থাপন হলে আসলেই ভালো হবে, এবং সেই হাসপাতালে কোন কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলে ভালো হবে, ওই অঞ্চলের মানুষের স্থানীয় প্রয়োজন কিভাবে সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা সম্ভব তা বলে দিতে পারবে। যেমন ধরি গাইবান্ধার মানুষের কোন্ ধরনের রোগবালাই বেশি হয়, হয়তবা গাইবান্ধার মানুষের নাক-কান-গলাজনিত সমস্যা বেশি হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায়, তাহলে গাইবান্ধায় যদি আমরা দুটি নাক-কান-গলা বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করি তাহলে কিন্তু সরকার মানুষের যে চাহিদা সেটা পূরণ করতে পারবে। এই পর্যালোচনা যদি সরকারকে সার্ভের মাধ্যমে পরিচালনও করতে হতো তাহলে তা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েক বছর লেগে যেতে পারত, যেটা কিনা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এবং সরাসরি জনশক্তি ব্যবহার না করে কয়েক দিনের মধ্যেই করে ফেলা সম্ভব।
জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সারাবিশ্বে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় যখন চীন, আমেরিকা, রাশিয়া এবং অন্যান্য উন্নত দেশে বিভিন্ন সিস্টেমস-এ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের আইসিটি সাপোর্ট সার্ভিস-এর উন্নতির জন্য, এমতাবস্থায় জাতি হিসেবে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কোনও সুযোগ নেই। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমি বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট সার্ভিসে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত আইসিটির ব্যবহার প্রশ্ন আকারে বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে তুলে ধরব।
১। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে? বাংলাদেশে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিন দ্বারা মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ। এটি ডেটা প্রসেস করতে, প্যাটার্ন চিনতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম এবং মডেল ব্যবহার করে কাজ করে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত সিস্টেমগুলিকে মানুষের মুখের ভাষা বুঝতে, ছবি প্রক্রিয়াকরণ অথবা ভিডিও বা ছবি থেকে তার বস্তু অথবা কি হচ্ছে তার ধারণা পেতে এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থান বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই সিস্টেমগুলো প্রচুর পরিমাণে ডাটা ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা সময়ের সাথে সাথে আরও অধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত করা যায়।
বাংলাদেশে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে কিন্তু এর ব্যবহারের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাঙ্কিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং ই-কমার্সের মতো শিল্পগুলি জালিয়াতি শনাক্তকরণ, চ্যাটবট এবং গ্রাহক বিশ্লেষণের জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। স্থানীয় স্টার্টআপগুলি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করতে চাচ্ছে এবং আমাদের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা কোর্স চালু করেছে। সর্বোপরি, সীমিত অবকাঠামো, দক্ষ পেশাদারের অভাব, এবং প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ডাটা না থাকার মতো চ্যালেঞ্জগুলি খুবই দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
২। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কি দৈনন্দিন জীবনে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে তরুণ প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে পারে?
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে সহায়তা করতে পারে?
সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত কিছু এপ্লিকেশন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যেমন আমরা বলতে পারি, ঝরৎর এবং অষবীধ-এর মতো ভার্চুয়াল সহকারী (virtual assistant)-এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে, এর সাথে অন্যান্য স্মার্ট হোম ডিভাইস, নেভিগেশন ডিভাইস এবং সফটওয়্যার, ট্র্যাফিক আপডেটের জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত অ্যাপস-এর বহুল প্রচলন হয়েছে। এছাড়াও, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নত, পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করতে সাহায্য এবং স্মার্ট নজরদারি সিস্টেমের মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আবহাওয়ার ধরন, কীট-পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং ফলনের পূর্বাভাসের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত করতে পারে। তারই সাথে, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত সেন্সর এবং ড্রোনের সাহায্যে মাটি এবং ফসলের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণের জন্য নির্ভুল চাষে সহায়তা করতে পারে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেম চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে, যেমন ইমেজিং এবং ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে রোগ শনাক্ত করা। এটি টেলিমেডিসিনকে সহায়তা করতে পারে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজগুলিকে আরও সহজ এবং দ্রুত করতে পারে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের সাথে পাঠগুলিকে অভিযোজিত করে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষাকে উন্নত করতে পারে। এটি প্রশাসনিক কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করতে পারে, অনলাইন শেখার প্ল্যাটফর্মগুলিকে সমর্থন করতে পারে এবং স্থানীয় ভাষায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
৩। কিভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? বাংলাদেশে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এর মাধ্যমে নতুন কি ধরনের চাকরির সুযোগ তৈরি হতে পারে?
বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তৈরিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করতে পারে, উৎপাদন, কৃষি এবং গ্রাহক পরিসেবার মতো শিল্পগুলিতে উন্নত করতে পারে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশ, ডেটা বিশ্লেষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে চাকরি তৈরি হবে। তরুণ প্রজন্ম উক্ত প্রযুক্তি-সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষতা বাড়াতে পারে, বিশ্ব বাজারে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, কিছু ক্ষেত্রে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যেমন, স্বয়ংক্রিয়তা কম দক্ষতার এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলিকে প্রতিস্থাপন করতে পারে, যা নির্দিষ্ট সেক্টরে স্বল্প পরিসরে কিছু চাকরির স্বল্পতা তৈরি করতে পারে। উক্ত প্রযুক্তি চালিত শিল্পগুলিতে অসম প্রবেশাধিকার শহুরে এবং গ্রামীণ কর্মীদের মধ্যে ব্যবধান বাড়াতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবগুলি কমানোর জন্য শিক্ষা এবং পুনঃস্কিলিং প্রোগ্রামগুলির সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সমাধানের চাহিদা বাড়লে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ এবং ডেটা বিজ্ঞানীদের ভূমিকা বাড়বে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমগুলিকে সমর্থন করার জন্য ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটা লেবেলিং এবং ডাটাবেস পরিচালনার সুযোগগুলি আবির্ভূত হবে। যে সকল ম্যানেজার কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত প্রজেক্টের তত্ত্বাবধান করতে পারে এবং প্রযুক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে তাদের চাহিদা অনেকগুণে বেড়ে যাবে। প্রোগ্রামিং এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত রোবোটিক্স, উৎপাদন এবং কৃষিতে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম এর ব্যবহারে কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। কৌশলগত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষকদের চাহিদা ক্রমাগতই বাড়তে থাকবে। পেশাদাররা যারা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা মডেলকে প্রশিক্ষণ দেন বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণের বিষয়ে ব্যবসায়কে গাইড করেন তাদের কদরও বাড়বে। গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং এবং মিউজিক কম্পোজিশনের মতো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা টুলস ব্যবহার করে কন্টেন্ট তৈরির ভূমিকা বরাবরের মতোই বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ডায়াগনস্টিক টুলস অপারেটর এবং স্বাস্থ্যসেবা ডেটা বিশ্লেষকদের মতো পদগুলি চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে, যেগুলোর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাবেই।
আজ তাহলে এ পর্যন্তই। ভবিষ্যতে আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রচলনের কারণে বাংলাদেশে প্রচলিত চাকরির কোন ঝুঁকি রয়েছে কি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা রাখার আশা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখক : প্রফেসর ড. শাহ জে মিয়া, অফ বিজনেস এনালিটিক্স। উপ-পরিচালক, সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড এন্ড রেস্পন্সিবল এআই, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া