জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে
সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ১০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

প্রথম নিউজ ডেস্ক: শীতের কারণে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কিন্তু এর বিপরীতে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক এবং মিত্র জোট ওপেক প্লাসের সরবরাহ সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। পাশাপাশি ইউক্রেন সংকটের ফলে কয়েক মাসের মধ্যে পণ্যটির দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওপেক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সময় পণ্যটির বাজারদর ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের সীমানা অতিক্রম করতে পারে। খবর রয়টার্স।
তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ১০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এর আগের দুই বছর ব্যারেলপ্রতি গড় দাম ছিল ১১০ ডলার। শেল অয়েলের (পাথুরে খাঁজ থেকে উত্তোলিত তেল) উত্তোলন বৃদ্ধি এবং বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৪ সালের পর ১০০ ডলারের গণ্ডি পেরোতে পারেনি বাজারদর। যা ২০২০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তবে মহামারি থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদার হওয়ায় এ পরিস্থিতির অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২০ সালে বিশ্বের করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় ধস নামে। ফলে পণ্যটির দাম ৩০ ডলারের ঘরে নেমে আসে। যদিও চলতি বছরের আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম তিন সংখ্যার ঘরে পৌঁছবে বলে ধারণা করেনি কেউ। তবে সম্প্রতি পণ্যটির চাহিদায় দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটতে থাকায় সেই পথেই এগোচ্ছে বাজার।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৮৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা সাত বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছর পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। চাহিদায় পুনরুদ্ধার এবং ওপেক ও ওপেক প্লাসের সীমিত হারে উত্তোলন বৃদ্ধির কারণে মূল্যবৃদ্ধির এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, লিবিয়া ও অন্যান্য দেশে সংকট এবং চাহিদায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের স্বল্পমেয়াদি প্রভাব চলতি বছর মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
চলতি বছর এখনো পর্যন্ত ওপেক জ্বালানি তেলের মূল্য পূর্বাভাস প্রকাশ করেনি। এ ছাড়া, এ বছরের জন্য মূল্য লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেনি জোটটি। ওপেক প্লাসের সংশ্লিষ্টরা এবং মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিরা প্রায়ই বাজারদরের গতিপথ ও পছন্দসই মূল্যের পর্যায় নিয়ে আলোচনা করতে অনীহাই প্রকাশ করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওপেকের পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে গোপনে কথা বলেছে, এর মধ্যে শুধু একজন জ্বালানি পণ্যটির দাম ১০০ ডলারে পৌঁছনোর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। বাকিরা বলেছেন, এমনটা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওপেকের শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলোর একটি সূত্র বলছে, দুই মাসের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে পড়তে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, পণ্যটির দাম ১০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। তবে এটি নিশ্চিতভাবে স্থায়ী হবে না।
সূত্র বলছে, ২০২০ সালে জ্বালানি পণ্যের চাহিদায় ধস নামলে জোটটি উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত বছর পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে একমত হন জোটের সদস্যরা। চাহিদা বাড়তে থাকায় প্রতি মাসে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জোটটি।
এক্ষেত্রে ১০ সদস্যবিশিষ্ট ওপেককে দৈনিক ২ লাখ ৫৩ হাজার ব্যারেল করে উত্তোলন বাড়ানোর সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু জোটটির অনেক ক্ষুদ্র উত্তোলক দেশ সরবরাহ বাড়াতে সক্ষম হয়নি। অন্যরা আবারো চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় উত্তোলন বাড়াচ্ছে না।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: