ইরাকে বিস্ফোরণ আবারো ইরানের কড়া বার্তা

শুক্রবারের এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিবত হয়ে পড়ে।

ইরাকে বিস্ফোরণ আবারো ইরানের কড়া বার্তা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের দামামায় মধ্যপ্রাচ্য অস্থির। ইরানের হামলার জবাবে ইসরাইল ড্রোন হামলা চালায়। শুক্রবারের এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিবত হয়ে পড়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার হয় যে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হচ্ছে না। যুদ্ধের আবহ অনেকটাই মিইয়ে গেছে। এদিনই ইরান আবার কড়া হুঁশিয়ারি দেয়। আঘাত করলে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’র পাল্টা আঘাত করা হবে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান এনবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন হুঙ্কার দিলেও ইরাকের রাজধানী বাগদাদের দক্ষিণে ব্যাবিলন প্রদেশের ক্যালসো সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের (পিএমএফ) একজন সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮ জন। 

এই সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে পিএমএফ, ইরাকি ফেডারেল পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। ফলে উত্তেজনা নতুন রূপ ধারণ করেছে। মিডিয়ার খবরে বলা হয়, হামলা হয়েছে লেবাননে ও সিরিয়ায়। কিন্তু কোনো খবরই নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা যাচ্ছে না। যুদ্ধক্ষেত্রে বা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এমন অবস্থাই হয়। ইরাকের পিএমএফ বলেছে, সেখানে যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা হামলা। তবে কে এই হামলা চালিয়েছে তা পরিষ্কার করে বলছে না কেউ। দায়ও স্বীকার করেনি কোনো দেশ। ইরাকের আরেকটি গ্রুপ ইরাকি রেজিস্ট্যান্স ফোর্সেস দাবি করেছে, এই হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তবে ইসরাইল তা অস্বীকার করেছে। এর জবাবে ইরাকিরা ইসরাইলের ইলাত শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইরাকে হামলা নিয়ে অনলাইন আল জাজিরা, ইসরাইলের টাইমস অব ইসরাইল, হারেৎস নানা রকম তথ্য দিয়েছে। বলা হয়েছে, ইরাকি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে ইরাকের বিস্ফোরণে পিএমএফের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন। তারাই দাবি করেছে, এই বিস্ফোরণ হয়েছে হামলার ফলে। সামাজিক মাধ্যমে প্রথমে এ বিষয়ের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। পরে তা ডিলিট করা হয়েছে। কিন্তু আল জাজিরা সেই ভিডিও দেখতে পেয়েছে। তাতে দেখা গেছে, হামলার ফলে একটি বড় গর্ত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, হামলার স্থানে আঘাত করেছে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র। ইরাক সরকার একে একটি বিস্ফোরণ বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে, এ নিয়ে তদন্ত করছে। কারা এটা করেছে তা শনাক্ত করা হয়নি। ইরাকের সেনাবাহিনী বলেছে বাবিল এলাকায় বিস্ফোরণের আগে বা বিস্ফোরণের সময় আকাশে কোনো ড্রোন বা যুদ্ধবিমান দেখা যায়নি। যেখানে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছিল না। এমনকি আহতদের কাছেও যেতে দেয়া হচ্ছিল না। 

টাইমস অব ইসরাইল বলছে, ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়েছেন। ওই ঘাঁটিটি ব্যবহার করেন ইরানপন্থি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর জোট। এর মধ্যে আছে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস বা হাশেদ আল শাবি। হাশেদ আল শাবি বিবৃতিতে বলেছে, বিস্ফোরণে ‘ম্যাটেরিয়াল ক্ষতি’ হয়েছে এবং হতাহত হয়েছেন। তবে কতজন আহত হয়েছেন তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানানো হয়নি। তারা ওই সামরিক ঘাঁটিতে আঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেখানে পাঠানো হয়েছে তদন্তকারীদের। একটি সামরিক সূত্র বলেছে, বিস্ফোরণে আঘাত লেগেছে সরঞ্জামে, অস্ত্রশস্ত্রে এবং যানবাহনে। বিস্ফোরণের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছে, এর সঙ্গে তাদের বাহিনী জড়িত নয়। এক্সে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড লিখেছে, শনিবার ইরাকে আকাশপথে কোনো হামলা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এতে দাবি করা হয়, এর সঙ্গে মার্কিন বাহিনী জড়িত বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তা মিথ্যা। উল্লেখ্য, কয়েক মাসে পিএমএফের কিছু সদস্য ইরাকে ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। তারা বলেছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ওইসব হামলা হয়েছে। 

ওদিকে ইরানে ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছে তাতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে মার্কিন বিভিন্ন মিডিয়াকে উদ্ধৃত করেছে টাইমস অব ইসরাইল। এর মধ্যে আছে এবিসি নিউজ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফক্স নিউজ প্রভৃতি। তবে ইরান তাদের এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, ইরানে খেলনা ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হচ্ছে শুক্রবার ইরানের ইস্পাহানে বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়। বিভিন্ন সূত্র একে ইসরাইলি হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তেহরান তা অস্বীকার করেছে। ফলে তারা এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবে না- এমনই ইঙ্গিত দেয়। ইরানি মিডিয়া ও কর্মকর্তারা বলেন, অল্প কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে। তাদের দাবি, ইস্পাহান শহরের ওপর তিনটি ড্রোনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলি করেছে। যে শব্দ শোনা গেছে, তা সেই গুলি ও গুলির পরে ড্রোন ধ্বংস হওয়ার শব্দ। 

পিএমএফ কি?
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার পর থেকে ইরাকে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান হয়। তার মধ্যে কয়েক ডজন সশস্ত্র গ্রুপ একত্রিত হয়ে ২০১৪ সালে একটি জোট গঠন করে। এর সংক্ষিপ্ত নাম পিএমএফ। এর সঙ্গে জড়িতদের অনেকেরই আছে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আইসিকের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গড়ে উঠেছিল এই জোট। এর মধ্যে আছে বেশির ভাগই শিয়া মতাবলম্বী। এছাড়া আছে খ্রিস্টান এবং সুন্নিরাও। ২০১৮ সাল থেকে ইরাকি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পিএমএফের প্রকৃতপক্ষে কত সংখ্যক সেনা আছে তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এই সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে। পিএমএফের কিছু গ্রুপ, যেমন খতিব হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা করেছে। এতে ইরাকি সরকারের সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। সামরিক শক্তির পাশাপাশি পিএমএফ রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তার করছে।