প্রথম নিউজ, অনলাইন: ফিলিস্তিনের গাজা, ভারত ও রোহিঙ্গাসহ সারাবিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমের পক্ষে সংহতি জানাতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষের জমায়েত হয়েছে। এই জমায়েতর ফলে প্রেসক্লাব এলাকায় ভোর থেকে সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) এই জমায়েতের আয়োজন করে আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের সংহতি সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও তারা ভোর থেকে প্রেসক্লাবের আশেপাশে এলাকায় জড়ো হতে থাকে। পর মানুষের সমাগম বেশি হওয়ার এক পর্যায়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ডিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জমায়েতে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। এতে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের আশেপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সংহতি সমাবেশ থেকে আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ ৬টি দাবি জানায়। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে— জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকান্ড ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল লোকসভায় বাতিল ঘোষণা করতে হবে; ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ থেকে জমায়েতের মানুষদের ৩টি অঙ্গীকার করানো হয়। অঙ্গীকার তিনটি হলো— ইসরায়েল ও ইন্ডিয়াসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখবো; পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখবো এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যে কোনো সময় যে কোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের উপর ইসরায়েলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরায়েলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। যতদিন আমাদের প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করবো না।
তারা বলেন, এখন আর ইসরায়েল শুধু ইসরায়েলেই সীমাবদ্ধ নেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও ইসরায়েলের এজেন্ট তৈরি হয়েছে। ইন্ডিয়ার মোদি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরায়েলের মতো আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইন্ডিয়ার সংখ্যালঘু মুসলমানদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে সম্প্রতি ইন্ডিয়ার লোকসভায় অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে। এই সমাবেশ থেকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মুসলমান নাগরিক হিসেবে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ইন্ডিয়ার নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো। এই দায়িত্ববোধ থেকে মজলুম মুসলমানদের পক্ষে আজকে যেভাবে দাঁড়িয়েছি ভবিষ্যতেও দাঁড়াতে পিছপা হবো না।
তারা আরও বলেন, ফিলিস্তিন ও ইন্ডিয়ার মুসলমানদের মতোই, আরাকানের মুসলমানরাও নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত। পতিত স্বৈরাচারী সরকার তাদেরকে নিয়ে ব্যবসা করেছে, কোনো সমাধান করে নাই। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তাঁর আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের জন্মভূমি, মাতৃভূমিতে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। আমরা এই সমাবেশ থেকে ড. ইউনুসকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
মাজারে হামলাকারীদের হুঁশিয়ারি করে বলেন, সারাদেশে ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সুস্পষ্ট জুলুম ও অমানবিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় ও সচেতন নাগরিক কখনোই এমন জুলুমকে, অনাচারকে সমর্থন করতে পারেন না। পরবর্তীতে আর কোনো মাজারের উপর যদি হামলা হয়, তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে তাদেরকে রুখে দিবো।
তারা বলেন, কেবল বাংলাদেশেই নয়, ইন্ডিয়াতেও প্রচুর পরিমাণে মাজার ও খানকায় হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উপর ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পরবর্তীতে আর কোনো মাজার বা খানকায় যদি হামলা হয় বাংলাদেশ থেকে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
পরে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশ শেষ হয়। আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের সভাপতি ও মুসুরি খোলা দরবার শরীফের পীর শাহ্ হাসানুজ্জামান এই সংহতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন ইসলামী বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ। আরও বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, আনম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আযহারী প্রমুখ।