ডিবি অফিসে কিসের নিরাপত্তা: নাহিদের মা
আমার ছেলেকে নিরাপত্তার জন্য এখানে আনা হয়েছে সেটি আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক।

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ‘আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সে কি আদৌ ডিবি অফিসে আছে, সেটাও নিশ্চিত হতে পারছি না। আগে একবার নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এবারো মারধর-নির্যাতন করা হচ্ছে কিনা এ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। ডিবি বলছে নিরাপত্তার কারণে তাদের কাছে রেখেছে। সন্তান তো মা-বাবার কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ডিবি অফিসে কিসের নিরাপত্তা?’
ডিবি হেফাজতে নির্যাতন করা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নাহিদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও আমাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আমরা খুব চিন্তাই আছি। তিনি বলেন, যদি তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য হেফাজতে নেয়ার প্রয়োজন ছিল, তাহলে তো পুলিশ হাসপাতালেই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারতো। নাহিদকে হেফাজতে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
আমার ছেলেকে নিরাপত্তার জন্য এখানে আনা হয়েছে সেটি আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক। আমরা চাই প্রতিটি সন্তানকে তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিক। এর আগে তুলে নিয়ে নাহিদকে নির্যাতন করা হয়েছে। এখন আবার তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা নাহিদের সঙ্গে দেখাও করতে পারিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও দুইজনকে তুলে আনা হয়েছে। ‘ডিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য’- এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদের মা বলেন, আমরা কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকি? সন্তান ডিবি’র ভেতরে, আমি কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকবো? আমি আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিতে চাই। পাঁচজনকেই যেন তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আমার প্রশ্ন নাহিদকে এখানে কেন নিয়ে আসবে? নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো না, অনেক খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় তাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় নাহিদের ফুপু বলেন, সর্বশেষ আমি নাহিদকে হাসপাতালে দেখে এসেছিলাম। তখন নাহিদের পায়ের ক্ষতগুলো বাজে অবস্থায় ছিল। আমরা নাহিদকে বাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন, কিছুদিন চিকিৎসার পরে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। নাহিদকে যেদিন ডিবিতে নিয়ে আসা হয়, আমাদের পরিকল্পনা ছিল এর পরের দিন নাহিদকে বাসায় নিয়ে যাবো। কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে সবশেষ যখন দেখা হয়েছিল তখনো নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। গায়ে জ্বর ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল।
এদিকে গতকাল সকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কোটা আন্দোলনের ৫ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ডিবি প্রধান বলেন, কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তারা যদি বিভিন্ন জায়গায় বলে, তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে, এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপদে নিয়ে আসা।
গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে ডিবি অফিসে গিয়েও ঢুকতে না পেরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার মা মমতাজ নাহার।